ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় এডিস মশার বিস্তার খুব বেড়েছে স্বীকার করেছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সেই সঙ্গে ডিএসসিসি এলাকায় যেসব ডেঙ্গু রোগী তার বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের বলে দাবি করেন তিনি।
খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন শেষে বুধবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এডিসের উৎসস্থল দেখে অবাক হচ্ছি। বিশেষ করে ছাদবাগানগুলোতে বিপুল পরিমাণে লার্ভার উৎস লক্ষ করছি। প্রায় ৮ হাজার বসতবাড়িতে অভিযান চালিয়েছি, তারপরও সেরকমভাবে সচেতনতা আমরা পাচ্ছি না।’
মেয়র বলেন, ‘ঢালাও ভাবে বলা যাবে না, আশি ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার। আমরা ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে যে তথ্য পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে -কেউ হয়তোবা হাসপাতালের ঠিকানা দিয়েছেন, নতুবা বলে দিচ্ছেন একটি জায়গা যেখানে সুনির্দিষ্ট ঠিকানাও আমরা পাচ্ছি না।
‘আবার অনেক সময় যখন আমরা যোগাযোগ করছি তখন দেখা যাচ্ছে, তারা কেউ হয়তো চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন, কেউ ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন, কেউ অন্য জায়গা হতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছেন, কেউ দুলাভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। দেখা যায়, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েই এখানে এসেছেন। আমরা বিপুল পরিমাণ রোগী পাচ্ছি, যারা বাইরের জেলা থেকে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নোয়াখালীর রোগী পাচ্ছি, যশোরের রোগী পাচ্ছি, গাজীপুরের রোগী পাচ্ছি। এরকম অনেক জায়গার রোগী পাচ্ছি। আমরা কিন্তু যাদের তথ্য পাচ্ছি, সব জায়গায় যাচ্ছি। তার মানে এই নয় যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিস্তার নেই? প্রচুর বিস্তার আছে।’
দেশে জুলাইয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২ হাজার ২৮৬ জনের দেহে। আর আগস্টের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২১ জনে। এর মধ্যে শুধু মঙ্গলবারই ২৪ ঘণ্টায় দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২২৬ জন।
ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভার বিস্তার ঠেকাতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন জনসচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছে। সেই সঙ্গে দুই সিটিতেই চলছে লার্ভা নিধনে চিরুনি অভিযান।
এডিস লার্ভার বিস্তার রোধে চলমান চিরুনি অভিযানে ঊর্ধ্বমুখিতা রোধ করে কিছুটা হলেও নিম্নমুখী নিয়ে আসতে পেরেছেন বলে জানান শেখ তাপস।
এর আগে তিনি দক্ষিণ কুতুবখালীতে খাল পরিষ্কার কার্যক্রম, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী খালপাড় এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম ও পরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েতগঞ্জ ম্যাটাডোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন বাইলেন এলাকায় সড়ক সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পাশাপাশি তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুকুর পাড় মসজিদ হতে মেহেরুন্নেসা স্কুল পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
রাজধানীসহ এ বছর ডেঙ্গু শনাক্ত আগের চেয়ে বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে ১০ আগস্টের হিসাবে জানানো হয়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন ২১১ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন ১৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর দেশে এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৯ জনের দেহে। এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন চার হাজার ৪৬ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৯১৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৫২ ডেঙ্গু রোগী।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।