রাজধানীর কাফরুল এলাকা থেকে নব্য জেএমবির নেতা জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ফোরকান ভাইকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
দুই সহযোগীসহ মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন টিম।
সিটিটিসির ভাষ্য, জাহিদ পুলিশের কাছে পরিচিত ‘বোমা মিজান’ হিসেবে। সংগঠনের সদস্যরা তাকে ডাকে ‘ফোরকান ভাই’। সিটিটিসির মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি ছিলেন তিনি।
কে এই জাহিদ
জাহিদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ আমাদেরকে জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ছাত্র হিসেবে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু জঙ্গিবাদে জড়িয়ে এবং হিজরত করার (অন্য জায়গায় যাওয়া) কারণে তিনি তার মাস্টার্স কোর্স শেষ করতে পারেননি।’
জাহিদ ২০১৬ সালে নব্য জেএমবির তৎকালীন আমির মুসার মাধ্যমে জঙ্গিবাদী জড়িয়ে যায় বলে জানান আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, জাহিদ ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামের একটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসার সঙ্গে পরিচিত হয়। মুসার কাছাকাছি থাকায় তখনকার সময়ের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে জাহিদের সখ্য তৈরি হয়। মেধা ও দক্ষতার কারণে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা তাকে সামরিক শাখায় নিয়োগ দেয়।
‘এরপর অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই ফোরকান সামরিক শাখার সদস্যদের হাতে কলমে বোমা-গ্রেনেড এবং আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন।’
জাহিদ ওরফে ফোরকানকে এতদিন কেন গ্রেপ্তার করা যায়নি, তার কারণ ব্যাখ্যা করেন আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষপর্যায়ের জঙ্গিরা ইতিমধ্যে মারা গেছেন অথবা গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু ফোরকান তার মেধা এবং সাহসের কারণে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
‘কিছুদিন ধরে নতুন আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে আবারও সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সে তার সংগঠনের সাহসী জঙ্গিদের বোমা তৈরির জন্য অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অত্যন্ত সাহসী ও সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহীদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত ফোরকান।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও জাহিদ তৎপরতা চালাতেন বলে দাবি সিটিটিসির প্রধানের।
তিনি বলেন, ‘সংগঠনটির কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং করে সে। ফোরকান তার শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।’
‘বড় নাশকতার পরিকল্পনা’
জাহিদ ওরফে ফোরকান বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানান আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, বড় কোনো রাসায়নিক সরবরাহ কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে কেমিক্যাল নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তার। সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে বোমা যুক্ত করে কোনো জায়গায় হামলার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সামরিক শাখার সমন্বয়ক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
সহযোগী কারা
সিটিটিসি জানিয়েছে, জাহিদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দুই সহযোগী হলেন সাইফুল ইসলাম মারুফ ও রুম্মান হোসেন ফাহাদ। তাদের মধ্যে মারুফ দক্ষ বোমা তৈরির কারিগর। তিনি অনলাইনে জাহিদের কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন মারুফ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মারুফ ও ফাহাদ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বান্দরবান এলাকায় যান। সংগঠনের তহবিল সংগ্রহে ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করতে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। সে জন্য গাজীপুরের টঙ্গী রেলগেট এলাকায় একটি বাসাও ভাড়া করেছিলেন তারা।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।