রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় পাঁচ বছরের শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদকে হত্যার অভিযোগে মো. সেলিম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ বলছে, কিডনি রোগে ও পেটের টিউমারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য একজনকে খুন করে আরেকজনকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন সেলিম। পরে শিশু জিসানকে অপহরণের পর হত্যা করেন তিনি।
গ্রেপ্তারের সময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, পরনে টি-শার্ট ও লুঙ্গি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. আহাদ।
তিনি বলেন, ‘আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। তার স্ত্রী নুপুর আক্তার অনেক দিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার পেটেও টিউমার রয়েছে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন।
‘বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে মঙ্গলবার টাকা চাইলেও মোটা অংকের টাকা না পেয়ে মনে মনে পরিকল্পনা করে যে, সে কোনো অবৈধ জিনিস বাবুলের বাড়িতে রেখে পরে সেটি অপসারণের তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করবে। এই চিন্তা থেকে জিসানুলকে অপহরনের পর খুন করেন সেলিম।’
হত্যার আগে শিশু জিসানকে অপহরণ করার দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়
উপকমিশনার মো. আহাদ জানান, ৬ আগস্ট বিকেল ৩টায় সমবয়সী পাঁচ-ছয় জন শিশুর সঙ্গে খেলতে যায় ভিকটিম জিসান। খেলা শেষে অন্য শিশুরা বাসায় ফিরে গেলেও সে বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে স্থানীয়রা জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালক নিয়ে গেছে জিসানকে। এ ঘটনায় শনিবার খিলগাঁও থানায় অপহরণ মামলা করেন জিসানের বাবা।
কেন জিসানুল ইসলাম আকাইদ খুন হলো
পুলিশ জানিয়েছে, খিলগাঁও নন্দিপাড়া নূর মসজিদ রোডে একটি নির্মাণাধীন পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে। মালিক থাকেন তিন তলায়। দোতলায় এখনও কাজ শেষ হয়নি। গ্রিল লাগানো হলেও দরজা লাগানো হয়নি। এ ভবনের মালিক বাবুল।
বাবুলের স্ত্রী ব্যাংকে চাকরি করেন। রিকশাচালক সেলিম ওই নারীকে রিকশায় করে প্রতিদিন ব্যাংকে নিয়ে যেতেন। যাওয়া-আসা বাবদ সেলিমকে প্রতিদিন একশ টাকা হিসাবে করে এই মাসে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন ওই নারী। তবে সেলিম আরও টাকা দাবি করেন। কিন্তু ওই ব্যাংকার নারী টাকা দিতে রাজি হননি।
তিনি সেলিমকে বলেন, ‘আমি তো নিয়মিত অফিসে যাই নাই। আর তোমাকে তো দুই হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তোমাকে শনিবার ডাকব, দোতলার বাসা পরিষ্কারের জন্য।
পুলিশের ভাষ্যে, এসময় সেলিম ভাবেন, এই বাড়িওয়ালা তো অনেক ভীতু, সে পুলিশকে খুব ভয় পায়। তখন সেলিমের মাথায় আসে কাউকে মেরে যদি ওই বাসায় ফেলে রাখা যায়, তবে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা যাবে। সেলিম বলবে, আপনার বাসায় লাশ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের টাকা না দিলে পুলিশ ডেকে আনব। আর টাকা দিলে আমি লাশ সরিয়ে ফেলব।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় জিসান নিয়ে গিয়ে সেখানে থাকা রশি দিয়ে তার দুই হাত বেঁধে ধারাল ক্ষুর দিয়ে তার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন সেলিম। পরে সে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালায়।
যেভাবে গ্রেপ্তার রিকশাচালক সেলিম
অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালক শিশুটিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা রিকশাটি অনেক গ্যারেজে খোঁজা হয়। পরে সবুজবাগ এলাকায় গিয়ে রিকশাটি পাওয়া যায়। রিকশা পাওয়া গেলেও রিকশার ড্রাইভারকে পাওয়া যায় না। তবে তার নাম জানা যায় সেলিম। তখন সেলিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে সেলিমের মায়ের কাছে জানতে চাইলে তার মা বলেন, ‘দুপুরে আসছিল। চলে গেছে।’
পরে গ্যারেজে গ্যারেজে খোঁজা শুরু করে পুলিশ। গোরান এলাকার একটা রিকশার গ্যারেজের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেলিম মুড়ি মাখা খাচ্ছেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি সেলিমকে ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।