মিরপুরের বস্তিতে থাকেন পারুল আক্তার। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার হাতে আধুনিক সেবাসম্পন্ন ফ্ল্যাটের চাবি যখন তুলে দেয়া হয়, তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।
বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক ৩০০ ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফ্ল্যাট পাওয়া বস্তিবাসী পারুল আক্তার বলেন, ‘আগেও টাকা দিয়ে বস্তিতে থাকতে হইত, কিন্তু কম টাকায় এখন ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাইছি। এ জন্য আমরা খুশি।’
ফ্ল্যাট পাওয়া বস্তিবাসী জানান, বস্তিতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। ঝড়বৃষ্টিতে কষ্টের সীমা থাকে না, অথচ ভাড়া দিতে হয় বেশি। সেদিক দিয়ে স্বচ্ছন্দ জীবন হবে তাদের জন্য বরাদ্দ ফ্ল্যাটগুলোতে।
তবে ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়া অনেকেই জানান, ভাড়া আরও কম হলে ভালো হতো।
মিরপুরের বাউনিয়াবাদ বস্তিতে থাকেন উজ্জ্বল কুমার। ফ্ল্যাট বুঝে পেয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে ভাড়া বস্তির চেয়ে কম।
আগে বস্তিতে থাকতাম এক রুম নিয়ে। এখন পরিবার নিয়ে কম ভাড়ায় ভালোভাবে থাকতে পারব।’
উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘২২ বছর ধরে ওই বস্তিতে আছি। সরকার আমাদের জন্য এই যে প্রজেক্ট নিছে, তাতে আমরা খুশি। সরকার আমাদের মতো গরিবদের জন্য যে কাজ করতেছে, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। তয় সরকার যদি আমাদের নামে এই ফ্ল্যাটগুলো দিয়ে দেয়, তাহলে ভালো হয়। আর ভাড়া আরেকটু কম করলে ভালো হইত।’
২০ বছর ধরে মিরপুরের কলাবাগান বস্তিতে থাকেন লিপি আক্তার। তিনি বলেন, ‘স্বামী নাই। তিন মেয়েরে নিয়া থাকি। তাদের নিয়া ভালোভাবে থাকতে পারব।’
লিপি বলেন, ‘ফ্ল্যাটে আমাদের ভাড়া দিতে হবে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আমি আগে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতাম দুইটা রুম নিয়া। তাতে আমাগো ১০ হাজার টাকা চইলা যাইত।’
ফ্ল্যাটের কাজগপত্র পেয়ে উৎফুল্ল বস্তিবাসী। ছবি: নিউজবাংলালিফট, জেনারেটর, সৌরবিদ্যুৎ, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, বিদ্যুতের সাবস্টেশন ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিং ভবন আবাসিক ভবন এলাকায়। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক- এই চার ক্যাটাগরিতে বস্তিবাসী ভাড়া দিতে পারবেন। দৈনিক ১৫০ টাকা, সাপ্তাহিক ১ হাজার ৫০ টাকা, পাক্ষিক ২ হাজার ২৫০ টাকা ও মাসিক ৪ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দেয়া যাবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যোগ দেন। এর আগে বাসে করে প্রাপকদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনে প্রায় ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ফ্ল্যাটের প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৮ সালে। ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাটের মধ্যে ৩০০ ফ্ল্যাট মঙ্গলবার বস্তিবাসীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হয়ে বস্তিবাসীর হাতে ফ্ল্যাটের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্রে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভাড়াগ্রহীতা ফ্ল্যাটে বসবাস করতে না চাইলে ন্যূনতম ১৫ দিন আগে লিখিতভাবে অবহিত করবেন এবং ফ্ল্যাটের দখল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি গ্রহণ করবেন।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে নগদে অথবা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে মানি রসিদ/চালানের মাধ্যমে অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করা যাবে। ফ্ল্যাটের ভাড়াসহ প্রযোজ্য সার্ভিস চার্জ ও ইউটিলিটি বিল প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।