বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হংকং থেকে ফ্রিকোয়েন্সি কিনে সম্প্রচার চলছিল জয়যাত্রার

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২১ ১৪:৫৯

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, স্যাটালাইট টেলিভিশনের অনুমতি না থাকলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইপি টেলিভিশন জয়যাত্রা ২০১৮ সাল থেকে সম্প্রচার হয়ে আসছিল।

আইপিটিভির নামে স্যাটেলাইটে সম্প্রচার চালাচ্ছিল জয়যাত্রা টিভি। ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউনলিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছিল। যার ফ্রিকোয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়। এর জন্য হংকংকে মাসে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করত জয়যাত্রা।

জয়যাত্রা টিভির জিএম (এডমিন) হাজেরা খাতুন ও প্রতিনিধি সমন্বয়ক সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে র‍্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরের র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, স্যাটালাইট টেলিভিশনের অনুমতি না থাকলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইপি টেলিভিশন জয়যাত্রা ২০১৮ সাল থেকে সম্প্রচার হয়ে আসছিল।

এ ছাড়া দেশে সম্প্রচারের জন্য ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে রিসিভার দিয়ে ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হতো বলেও জানান তিনি।

খন্দকার মঈন বলেন, দেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচার হয় জয়যাত্রা টিভি। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষে ব্যাপক উদ্দেশ্য প্রণোদিত পরিকল্পনা নেয়া হয়। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা যায়।

মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরের এক পোশাক কারখানায় অ্যাডমিন (এইচআর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকটাত্মীয় এবং একইসাথে কর্মদক্ষতা শুনে হেলেনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০১৬ সালে তিনি ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ এর ডিজিএম হন। ২০১৮ সালে জয়যাত্রা টিভি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) পদে নিযুক্ত হন। হাজেরা মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনার আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ‘হাজেরা খাতুন আমাদের জানান, অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়েছেন জয়যাত্রা টিভিতে। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা, উৎসাহে বা চাপে, নির্দেশনায় জয়যাত্রা টিভির কোনো কোনো প্রতিনিধি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডেও জড়িত হন।’

এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তির প্রচার, প্রার্থিতা প্রচার, সাক্ষাৎকার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ গ্রেপ্তার দুজনের মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রহণ করতেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

খন্দকার আল মঈন জানান, যেসব বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে প্রচার হতো না সেগুলো জয়যাত্রা টিভিতে প্রচার করা হতো। যেমন, তাবিজ-কবজ, টুটকা-ফাটকা, ভাগ্য বলে দিতে পারে, জ্বীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, ফাঁড়া কেটে যাওয়া এবং গোপন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি।

গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে তিনি নিজ প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার চালাতেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুতদের একইভাবে হেনস্থা করতেন।

জয়যাত্রা টিভির বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে তিনি নেতিবাচক উদ্দেশ্য চরিতার্থে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। মূল মিডিয়া জগতের বিপরীতে তিনি একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন, যেখানে ৫ হাজার সংবাদকর্মীর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তিনি দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি ঢাকায় কর্মী সমাবেশ করতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের শো-ডাউনে তাদেরকে ব্যবহার করতেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হতো। এই সংগঠনের প্রায় ২০০ সদস্য রয়েছেন। যাদের কাছ থেকে সদস্য পদ বাবদ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যার অল্পকিছু মানবিক কাজে সহায়তা দিলেও অবশিষ্ট অর্থ তার সন্তানদের নামে সঞ্চয় করা হতো বলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান।

গ্রেপ্তার সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজি অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে প্রদান করতেন বলে জানান।

এ ছাড়া তিনি গাজীপুর ও তদসংলগ্ন এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।

এ বিভাগের আরো খবর