বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘প্রতারক’ ঈশিতা

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২১ ২৩:১২

নাম ইশরাত রফিক ঈশিতা। ছিলেন চিকিৎসক। পরে চলে যান প্রতারণার জগতে। নিজেকে কখনও পরিচয় দিতেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে। কখনও পরিচয় দিতেন ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশনের সদস্য বলে। ভুয়া ডিগ্রি, পদ-পদবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আইপি চ্যানেলে চালাতেন নিজের প্রচার প্রচারণা।

ডাক্তারি পাস করে শুরু করেছিলেন চিকিৎসা সেবা। সেখানে থিতু হতে পারেননি। শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকেই বিপথে ইশরাত রফিক ঈশিতা। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষকসহ নানা পরিচয়ে প্রতারণা করাই হয়ে ওঠে তার পেশা। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

ঈশিতা ও শহিদুল ইসলাম দিদার নামে তার এক সহযোগীকে রোববার সকালে আটক করে র‍্যাবের একটি দল। বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

র‍্যাব জানায়, ঈশিতা ফিলিপাইনের একটি ওয়েবসাইট থেকে ৪০০ ডলারে সামরিক বাহিনীর ‘বিগ্রেডিয়ার জেনারেল’ ভুয়া র‌্যাঙ্ক কেনেন। সে অনুযায়ী র‌্যাঙ্ক, ব্যাচ ও পোশাক বানিয়েছিল। তার দেখানো পথে ভুয়া মেজর জেনারেল র‌্যাঙ্ক কিনে ব্যবহার করতেন সহযোগী দিদারও।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঈশিতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছাড়াও নিজেকে ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশনের সদস্য বলে পরিচয় দিতেন। ভুয়া ডিগ্রি, পদ-পদবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আইপি চ্যানেলে নিজের প্রচার প্রচারণা চালাতেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে টকশোতে অংশগ্রহণ করতেন।

র‍্যাব বলছে, ভুয়া সার্টিফিকেট, এডিটিং ছবি, মিথ্যা বিবৃতি ও তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবাইকে বিভ্রান্ত করতেন ঈশিতা। এ ছাড়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী শিশু অধিকার, চিকিৎসা বিজ্ঞান, করোনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচক হিসেবে নিজের প্রচার চালাতেন।

আটকের সময় ঈশিতার বাসা থেকে ভুয়া কিছু আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, সীল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০টি ইয়াবা ও ৫ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের ব্রিফিংয়ে বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ইশরাত রফিক ঈশিতা পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। এরপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। চারমাস চাকুরির পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন।

র‍্যাব জানায়, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকে ঈশিতা প্রতারণা শুরু করেন। চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। যেমন- এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি। তা ছাড়া, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও নিজের প্রচার চালাতেন।

র‍্যাবের মুখপাত্র মঈন জানান, করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় আরও বেশি সক্রিয় হন ঈশিতা। অর্থের বিনিময়ে অনলাইনে করোনা বিষয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন এবং সার্টিফিকেট প্রদান করতেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ঈশিতা ‘ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার ফর হিউমিনিটি’ নামে একটি অনিবন্ধনকৃত ও অননুমোদিত সংগঠন পরিচালনা করছিলেন, যেটির সদরদপ্তর নিউইয়র্কে বলে প্রচারণা চালাতেন। অথচ এই পেজের কো-অ্যাডমিন ছিলেন ঈশিতাই। এই পেজের মাধ্যমে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতারণা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন তিনি।

র‍্যাব জানায়, এই সংগঠনের জন্য নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, আমেরিকা, নাইজেরিয়া, ওমান ও সৌদি আরবসহ অনেক দেশে অর্থের বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করেন ঈশিতা। এসব দেশে সংগঠনের ব্যানারে সেমিনার, অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হতো।

যেখানে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হতো সেখান থেকে অর্জিত অর্থ ইশরাত ও তার প্রধান সহযোগী দিদার ভাগ করে নিতেন বলে র‍্যাব তথ্য পেয়েছে।

ঈশিতা ও দিদারের ব্যবহার করা বিভিন্ন ভুয়া পদ-পদবি। ছবি: নিউজবাংলা

কে এই দিদার

ঈশিতার ‘বস’ হিসেবে পরিচয় দেয়া তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদার সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‍্যাব।

বাহিনীটি জানায়, ২০১২ সালে ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা (ইঞ্জিনিয়ার) শেষ করেন দিদার। পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা শেষ করে বর্তমানে একটি গার্মেন্টেসে ম্যানেজার হিসেবে কাজ চাকরি করছেন। দিদারও ফিলিপাইনের একটি অনলাইন সাইট থেকে টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনীর ‘মেজর জেনারেল’ পদ কেনেন।

র‍্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নিজেকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার ফর হিউমিনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বা কর্ণধার হিসেবে পরিচয় দিতেন দিদার। একইভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দূত বা অ্যাম্বাসেডর পরিচয় দিতেন তিনি। এভাবে দেশে ও বিদেশে প্রতারণা, চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ মালিক হয়েছেন দিদার।

ঈশিতা ও দিদারের নানা প্রতারণা প্রেস ব্রিফিংয়ে তুলে ধরে র‌্যাব। ছবি: নিউজবাংলা

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুই ভাগে ৬০ জনকে নিয়ে ঈশিতা ও দিদার করোনা বিষয়ে সেমিনার করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তারা ৪ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন সার্টিফিকেটের বিনিময়ে।

র‍্যাব বলছে, সার্টিফিকেটগুলো বিদেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বললেও অনুসন্ধানে জানা যায় এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, তরুণদের নিয়ে এ রকম আরেকটি প্রোগ্রাম করেছেন ঈশিতা ও দিদার। সেখানে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিত করা হয়। তরুণদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এই প্রোগ্রামের রেজিস্ট্রেশন বাবদ তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেয়া হয়।

র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিজের প্রচারণার জন্য ঈশিতা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টকশো করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সামাজিক পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা চালান।

এ বিভাগের আরো খবর