সুযোগ বুঝে কোনো একটি পোশাক কারখানায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের চালক হিসেবে চাকরি নেন আসাদুজ্জামান মোল্লা আসাদ। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর বদল করেন চাকরি। এভাবে কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন কর্মস্থলে যান তিনি। তার উদ্দেশ্য পণ্য পরিবহনের সময় কারখানার কাপড় চুরি।
পরবর্তী সময়ে চুরি করা কাপড় তিনি বিক্রি করেন চোরাই মার্কেটে। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন আরও কয়েকজন।
একটি গ্রুপের কাপড় চুরির ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসাদসহ তার সহযোগীদের খোঁজ পায় পুলিশ। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
ডিবির ভাষ্য, গ্রেপ্তারের সময় তিনজনের কাছ থেকে নোমান গ্রুপের চুরি হওয়া একটি কাভার্ডভ্যানসহ আট লাখ টাকা মূল্যের কাপড় উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার বাকি দুজন হলেন আল আমিন ওরফে সরোয়ার ও আবেদ আলী।
ডিবি জানিয়েছে, দুজনের মধ্যে আল আমিন নিজ বাসায় চুরির পর কাপড়গুলো স্টক করতেন। আর আবেদ আলী চোরাই মার্কেটে কাপড়ের ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, পোশাক কারখানার পণ্য চুরি যাওয়ার ঘটনায় সম্প্রতি একটি কমিটি হয়, যাতে ডিবির সদস্যরারও রয়েছেন। ঘটনা তদন্তের ধারাবাহিকতায় এ চুরি চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
তিনি জানান, নোমান গ্রুপের কাপড় চুরি যাওয়ার ঘটনার দুই দিনের মধ্যেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর ধৌর ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যানসহ চালক আসাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আল আমিনের গোডাউন থেকে চুরি যাওয়া ৮ হাজার ৪৬০ মিটার কাপড় জব্দসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, আসাদ চালক হিসেবে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। মালামাল পরিবহনের সময় সুবিধামতো সময়ে কাভার্ডভ্যানসহ চুরি করে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরে আবার অন্য পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে নতুন করে চুরির পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, আসাদ চুরি করে কাভার্ডভ্যানসহ কাপড়গুলো আল আমিনের গোডাউনে রাখতেন। পরে আবেদের মাধ্যমে চোরাই বাজারে সেসব কাপড় বিক্রি করা হতো।
ডিবি জানায়, আসাদের বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিগঞ্জ ও টঙ্গি পূর্ব থানায় মামলা ছিল।
মালামাল চুরির বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গার্মেন্টস মালিকদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। যাকে চালক হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়, তার পরিচয়পত্র, ঠিকানা ও স্বজনদের বিস্তারিত তথ্য রাখা উচিত, যাতে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত চালককে শনাক্ত করা যায়।
‘এ ছাড়া পণ্য পরিবহনের সময় কাভার্ডভ্যান ট্র্যাকিংয়ের জন্য জিপিএস ডিভাইসও বসানো যায়। যারা কাপড় কিনেন তাদেরও খেয়াল রাখা উচিত এসব চোরাই কি না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।