করোনার সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের শাটডাউনের মধ্যে পুরান ঢাকায় রিকশার পাশাপাশি কিছু অটোরিকশা ও ইজিবাইক প্রথম থেকেই চলাচল করে আসছিল। তবে শাটডাউনের নবম দিনে লালবাগ এলাকার আবারও রাজসিক বা ঘোড়ার গাড়ি চলাচলা শুরু হয়।
নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির কাছে সেকশন বেড়িবাঁধ থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত চলাচল করছে ঘোড়ার গাড়িগুলো। দুটি ঘোড়া দিয়ে টেনে নেয়া এই রাজসিকে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে।
রাজসিক চালক মো. জসিম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। যা পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে গুলিস্তানের মধ্যে চলাচল করে থাকে।
গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা করে নিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ মানুষ অনেকটা শখ করেই এই ঘোড়ায় টানা পরিবহন বা ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করে থাকেন।
তিনি নিউজবাংলাকে আরও জানান ‘আরে ভাই, না খাইয়া মরতাসি। কিসের লকডাউন পালন করুম কন দেহি। মা-বাপ, ভাই-বোন, বউ-বাচ্চা নিয়ে বহুত মুসিবতে আছি। কেউ ডাইহা (ডেকে) জিগায় না, ক্যামন আছি।’
লকডাউনে রাজসিকের চালকরা বেকার হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবার এবং ঘোড়ার খরচ কোনটিই চালাতে পারছেন না। ছবি:নিউজবাংলা
কথাগুলো বলে সে যাত্রী বোঝাই করে চলে যান।
একটি রাজসিক চালানোর জন্য দুই জন লোক থাকে। একজন ঘোড়া পরিচালনা করেন, অপর জন যাত্রী ওঠা-নামার কাজে সাহায্যের পাশাপাশি ভাড়া তুলেন।
অপর একজন চালক তোতা মিয়া বলেন, ‘আমরা বেকার বসে থেকে আমাদের পরিবার এবং ঘোড়ার খরচ কোনটিই চালাতে পারছি না।
‘এভাবে বেকার বসা থাকলে আমরা না খেয়ে মরব শুধু তাই নয়? আমাদের ঘোড়াগুলোকেও বাঁচাতে পারব না। কি দিয়েই বা সংসার চালাব? আর কি দিয়েই বা ঘোড়াগুলোকে খাবার কিনে খাওয়াব? কপালে যা থাকে থাকুক। কোনো উপায় না পেয়ে রুজি করতে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছি।’
সরকার ঘোষিত শাটডাউনে এই সকল পেশাজীবীদের জন্য কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা কেউ করতে আসেনি বলে তারা আক্ষেপ করেন। তাই নিরুপায় হয়ে লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে তারা অনেকটা বাধ্য হচ্ছেন রাস্তায় গাড়ি নামাতে।