বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাত হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায়

  •    
  • ৩০ জুলাই, ২০২১ ১৯:৩৭

চাকরিজীবী আবদুস সালাম বলেন, ‘মানিকগঞ্জের বাচামারা ইউনিয়ন ঘাট থেকে সাত হাজার টাকা নৌকা ভাড়া নিছে। নৌকায় আমরা ১১ জন আছিলাম। নৌকা থাইকা গাবতলী নামছি। আমরা একলা না, আমাগো মতো আরও ১০-১২টা নৌকা ছাড়ছে ঘাট থাইকা। এখন রিকশা লইয়া শনির আখড়ায় যামু।’

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বা শাটডাউনের যত দিন যাচ্ছে, ততই ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়ছে। ঢাকায় আসার জন্য তাদের আছে নানা যুক্তি। দীর্ঘ পথে নানা কষ্ট স্বীকার করেও তারা ঢাকায় আসছেন। কেউবা সড়কে, কেউ আবার আসছেন নৌকা ভাড়া করে। কেউ আসছেন দীর্ঘ পথ হেঁটে বা মোটরসাইকেলে চড়ে।

শুক্রবার দেশের উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ গাবতলীতে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বেড়াতে গিয়ে মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে আটকা পড়েছিলেন চাকরিজীবী আবদুস সালাম ও তার পরিবারের সদস্যরা। শাটডাউনের কারণে আসতে না পারলেও আর কত দিন থাকা যায়? তাই শাডডাউন মাথায় নিয়ে ঢাকায় রওনা দেন। তবে অন্যদের মতো সড়কপথে নয়। ভাড়া করা (রিজার্ভ) নৌকায় পরিবারের চার সদস্যসহ মানিকগঞ্জের বাচামারা ইউনিয়ন থেকে নৌপথে গাবতলী হয়ে ঢাকায় ফেরেন তিনি।

আবদুস সালাম বলেন, ‘বাচামারা ইউনিয়ন ঘাট থেকে সাত হাজার টাকা নৌকা ভাড়া নিছে। নৌকায় আমরা মোট ১১ জন আছিলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় নৌকায় উঠছি। সাড়ে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগছে। রাস্তায় আইলে তো অনেক কষ্ট। গাড়ি নাই, রিকশা-ভ্যানে কইরা ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা আইতে হয়। নৌকায় বইচি আর কষ্ট নাই। নৌকা থাইকা গাবতলী নামছি। আমরা একলা না, আমাগো মতো আরও ১০-১২টা নৌকা ছাড়ছে ঘাট থাইকা। এখন রিকশা লইয়া শনির আখড়ায় যামু।’

১ জুলাই থেকে চলমান শাটডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে আসা নিষেধ। রিকশা ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। তবে ঈদুল আজহায় চলাচলের সুবিধার জন্য মাঝে সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে ২৩ জুলাই থেকে আবারও শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহব্যাপী বিধিনিষেধ। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কড়া বা ‘কঠোরতম’ এ বিধিনিষেধে রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে ও বের হওয়ার মুখে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে কড়া নজরদারি। তারপরও জরুরি প্রয়োজনের পাশাপাশি নানা অজুহাতে ঢাকায় আসছে-যাচ্ছে মানুষ। তবে পথে যানবাহন না থাকায় তাদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

গাবতলীতে প্রবেশপথে পুলিশের চেকপোস্টে দায়িত্বরত ডিএমপির উপপুলিশ পরিদর্শক মো. বায়েজিদ মোল্লা বলেন, ‘আমরা শতভাগ গাড়িই তল্লাশি ও নজরদারিতে রেখেছি। যেসব গাড়ি জরুরি সেবার মধ্যে রয়েছে, সেগুলো যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করছি। এর বাইরে যেসব গাড়ি আসছে, তাদের যাত্রীর যুক্তিসংগত কারণ দিতে পারলে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।

‘তবে আজ বেশির ভাগই আসছেন চিকিৎসা নিতে, না হয় প্রবাসী যারা করোনা পরীক্ষা করতে আসছেন। আমরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যৌক্তিক কারণ ছাড়া বের হওয়ায় দুটি গাড়ির মালিককে জরিমানা করেছি।

‘তবে অনেকেই বিনা কারণেও আসছে। এর মধ্যে পায়ে হেঁটে ঢুকছে এমন মানুষের কিছুটা চাপ রয়েছে। কিন্তু যারা হেঁটে আসছে তাদের তো আর আটকানো যাচ্ছে না। আমাদের তা করার অনুমতি দেয়া হয়নি।’

লকডাউনে গাবতলী হয়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন ঢাকামুখী বহু মানুষ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

পাবনা থেকে গাড়িতে করে নানা বিপত্তি পেরিয়ে গাবতলী পর্যন্ত এসেছেন রিয়াজুল আলম। যাত্রাকালীন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাবনা থেকে সকাল ৭টায় হাই-এইচ (মাইক্রোবাস) গাড়িতে উঠছি। জনপ্রতি ১২০০ টাকা ভাড়া নিছে। পথে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও রাস্তায় চারবার নামায় দিছে। সামনে গিয়া আবার উঠছি। চেকপোস্টের আগেই ড্রাইভার বইলা দেয়। আমিনবাজার ব্রিজের আগেই নামায় দিছে। আমাদের গাড়িতেই ১১ জন যাত্রী ছিল।’

অনেক যাত্রী আবার বিভিন্ন পণ্যবোঝাই গাড়িতেও যাতায়াত করেছেন। সিঙ্গাইর থেকে আসা যাত্রী সাইফুল বলেন, ‘আমাগো এলাকা থেকে দুধের গাড়ি ঢাকায় আসে। তাগোর লগেই আসছি। অনেকেই এমন করেন। যাইবার দরকার হইলে তাগো কল করলেই তারা কখন আসবো কইব। দরকার পড়রে আবার যামুগা।’

তবে অনেকেই বেশ কষ্ট করেই বিভিন্ন পথ ভেঙে ভেঙে এসেছেন। তাদের একজন সিরাজগঞ্জের সোবহান। তিনি বলেন, ‘সকালে মোটরসাইকেলে রওনা করছি। ঢাকা পর্যন্ত জনপ্রতি ১৫০০ টাকা ভাড়া। কিন্তু টাঙ্গাইলে পুলিশ মোটরসাইকেল ধরে মামলা দিছে। তারপর আমার কষ্ট শুরু। কখনও অটোরিকশা, কখনও হেঁটে। আবার কখনও রিকশায় গাবতলী আসছি। অফিস মেসেজ দিয়েছে, কাল থেকে খুলতে পারে। খুললে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে।’

পাবনা থেকে আসা আনোয়ার বলেন, ‘কষ্ট কমানোর জন্য পাবনা থেকে কাজিরহাট-আরিচা হয়ে ঢাকায় আসছি। ফেরি খোলা আছে, তবে অনেক কড়াকড়ি। আরিচা থেকে মোটরসাইকেল আর রিকশায় করে গাবতলী আসছি। পুলিশ অন্তত ১০ জায়গায় চেক করছে। অনেক কষ্ট হইছে আসতে।’

এ বিভাগের আরো খবর