বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নার্সকে করোনা রোগীর ছুরি, পিটুনিতে আহত পরে মৃত্যু

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২১ ২২:১০

শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সবুজ। ঠিক কী কারণে নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে তার গোলযোগ বাধে তা স্পষ্ট নয়। তবে তার ছুরি হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন। পরে সবুজকেও মারধর করেন হাসপাতালের স্টাফরা। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় সবুজের। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। সবুজের পক্ষেও মামলা প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তার শ্বশুর।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট নিয়ে উত্তরার শিন-শিন জাপান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের সবুজ পিরিস। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দায়িত্বে থাকা নার্স ও স্টাফদের ছুরিকাঘাত করেন সবুজ। তাকেও অন্তত ৩০ জন মিলে মারধর করে, চার হাত-পা বেঁধে আইসিইউ এর বাইরে ফেলে রাখা হয়। পরদিন পুলিশের সহায়তায় শিন-শিন জাপান হাসাপাতাল থেকে সবুজকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাইড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার মারা যান সবুজ।

তার পরিবারের অভিযোগ, আইসিইউতে আর থাকতে না চাওয়া নিয়ে নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে সবুজের বাকবিতণ্ড হয়। এক পর্যায়ে সবুজকে মারধর শুরু করেন তারা। আর আত্মরক্ষার্থে তিনি ছুরি নিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। সবুজকেও ব্যাপক মারধর করে আইসিইউর বাইরে বেঁধে ফেলে রাখা হয়। মারধরের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মারধর করে হত্যার অভিযোগে শিন-শিন জাপান হাসপাতালের বিরুদ্ধে বুধবার উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করার জন্য অভিযোগ দিয়েছেন সবুজ পিরিসের শ্বশুর। এর আগে সবুজের বিরুদ্ধে দুই নার্স ও এক ওয়ার্ডবয়কে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন হাসপাতালের ম্যানেজার।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আইসিইউতে থাকা অবস্থায় ২৩ জুলাই রাত দেড়টার দিকে অতর্কিতভাবে দায়িত্বে থাকা দুই নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয়কে ছুরিকাঘাত করেন সবুজ। তিনজনের মধ্যে মিতু রেগো নামে নার্সের অবস্থা সংকটাপন্ন। বাকি দুজনও চিকিৎসাধীন। তাদেরকে শিন-শিন জাপান হাসাপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সবুজ যেভাবে এলেন শিন-শিনে

করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় সবুজের পরীক্ষা করানো হয়। ১৭ জুলাই তার রেজাল্ট আসে পজেটিভ। ১৮ জুলাই ভোররাতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখনই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ফাঁকা আইসিইউ এর সন্ধান না পেয়ে শিন-শিন জাপান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

সবুজের শ্বশুর জ্যোতি কস্তা নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা স্কয়ারে করোনার টেস্ট করিয়েছিলাম। সেখানেই ভর্তির জন্য যাই। কিন্তু ওদের সিট ফাঁকা ছিল না। এরপর গেলাম ইউনাইটেডে, ওখানেও সিট নাই। অ্যাপেলোতেও সিট নাই। অ্যাপোলো হাসপাতালে যখন সিটের খবর নিচ্ছিলাম তখন ওই জায়গায় একজন শিন শিন হাসপাতালে সিট ফাঁকা আছে বলে জানায়। আমরা ভাল মন্দ যাচাই না করেই হাসপাতালে ভর্তি করাই।

জ্যোতি কস্তা বলেন, হাসপাতালে করোনার কোনো আলাদা ইউনিট না থাকলেও সবুজকে তারা ভর্তি নেয়। তারা আইসিইউতে ভর্তি করে।

২২ জুলাই রাতে আইসিইউতে কী ঘটেছিল

১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিন-শিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সবুজ। ২৩ জুলাই তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ২২ জুলাই রাত দেড়টার হঠাৎই ছুরি নিয়ে দায়িত্বে থাকা নার্সদের ওপর আক্রমণ করেন সবুজ। ছুরির আঘাতে দুইজন নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয় আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালটির ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ওই রাতে আমাদের কয়েকজন নার্স ও ওয়ার্ড বয় ডিউটিতে ছিলেন। সবুজ হঠাৎ করে ছুরি নিয়ে নার্সদের উপর আক্রমণ করে। আমাদের একজন নার্স সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বাকি দুজনও চিকিৎসাধীন।

সবুজ হঠাৎ করে কেন ছুরি নিয়ে আক্রমণ করলেন? এমন প্রশ্নে হাসপাতালের ম্যানেজার বলেন, সবুজ মাদকাসক্ত ছিলেন। ছয়দিন ধরে আমাদের এখানে ভর্তি থাকায় মাদক নিতে পারছিলেন না। এ কারণে হয় উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন। তার মাদক নেয়ার বিষয়টি পরিবারের কাছ থেকে জেনেছি।

তবে সবুজের পরিবার বলছে ভিন্ন কথা। শ্বশুর জ্যোতি কস্তা বলেন, ‘ওরা নামে বেনামে হাজার হাজার টাকার ঔষধ আমাদের দিয়ে কিনাইছে। সেগুলো সবুজকে দিছে কিনা জানি না। সবুজ প্রায় সুস্থ হয়ে গেছিল। ওই রাতে নাকি ও আইসিইউতে আর থাকতে চাইছিল না। এটা নিয়ে হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। হাসপাতালের লোকজন ওকে মারতে আসে। ও নিজের জান বাঁচাতে ছুরি দিয়ে প্রতিহত করা চেষ্টা করে।’

ঘটনার সময় আশপাশে থাকা লোকজনের কাছ থেকে এসব তথ্য জেনেছে সবুজের পরিবার। সবুজের কাছ থেকে সরাসরি জানার সুযোগ হয়নি তাদের।

সবুজের শ্বশুর বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা ছিলাম, কী হইছিল ওর মুখ থেকে শুনার জন্য। কিন্তু ওরেতো আর বাঁচানো গেল না। হাসপাতালের লোকজন ওরে মেরে ফেলছে।’

গত ২৬ জুলাই রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান সবুজ পিরিস। মারধরের কারণে তার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক দফা অপারেশনও করা হয়েছিল।

ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুর পর সবুজের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা বলেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। সেগুলোর রেজাল্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

তবে তিনি জানান, সবুজের শরীরের যেসব জায়গায় আঘাত ছিল সেখানে মাংসগুলো পঁচন ধরে গিয়েছিল।

দুই পক্ষের অভিযোগই তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘আগে হাসপাতাল থেকে একটি মামলা হয়েছে। আজকে সবুজের পরিবার থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছি। আমাদের তদন্ত চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর