বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একটা ডাকের অপেক্ষা

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২১ ১০:২৯

রাজমিস্ত্রি আকবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এমনও দিন গেছে যে দিনে তিন-চাইরডা কাজ করছি। নিজে অত কাজ না করতে পাইরা অন্যরে দিয়া দিছি। আর অহন আল্লা কী দিন দেখাইতাছে। কামের লাইগ্যা রাস্তায় খাড়ান লাগতাছে।’

রাজধানীর শান্তিনগর বাজার পেরিয়ে মূল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে, বসে আছেন কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কোদাল, ঝুড়িসহ নানা সামগ্রী। কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, কাজ চান তারা।

লকডাউনে নিয়মিত কাজ নেই বলে চলতি পথে কারও নজরে পড়ার আশায় থাকেন দিনমজুররা। কাজের জন্য একটা ডাক পেতে থাকেন অন্তহীন অপেক্ষায়।

তাদের একজন জামাল খান বলেন, ‘আগে রোজ ৮০০ তেন (থেকে) হাজার টাকা কামাইতাম। অহন তো ৫০০ কইরা একবেলা কাম করলে ৫ দিন কাম পাই না। সরকার আমাগোরে মানুষ মনে করে না। সব এমনে বন্ধ করার আগে আমাগোর খাওনের ব্যবস্থাডা করতে পারত। কেউ একটু সাহাইয্য করবার চায় না।

‘মাইঝে খালি এক পুলিশ গাড়ি থেইকা নাইমা আমাগোরে রুটি আর ভাজি কিন্না দিয়া কইল, আপনেরা খান। মানুষ আমাগোরে এমনে বইসা থাকতে দেইখা আইসা জিগায়, বইসা থাকি ক্যান। শুইনা চইলা যায়। কামও দেয় না, দুইডা টাহাও দেয় না।’

জামালের পাশে ছিলেন আকবর হোসেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

আগে কাজের চাপে এত বেশি থাকত যে, অনেক কাজ ছেড়ে দিতে হতো তার। কিন্তু লকডাউনে কাজের জন্য রাস্তায় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এমনও দিন গেছে যে দিনে তিন-চাইরডা কাজ করছি। নিজে অত কাজ না করতে পাইরা অন্যরে দিয়া দিছি। আর অহন আল্লা কী দিন দেখাইতাছে। কামের লাইগ্যা রাস্তায় খাড়ান লাগতাছে।’

আরেক দিনমজুর রহমত শেখ ঈদের আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পেটের তাড়নায় আবারও ফিরেছেন ইট-কাঠের শহরে।

তিনি বলেন, ‘সব গুটাইয়া বাড়িত গেছিলাম গা। ভাবছিলাম ডাইল- ভাত খাইয়া গেরামেই পইড়া থাকমু। কিন্তু আর অইল কই। ওইখানে আরো কাম কাইজ নাই, আবার ফিরন লাগল।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদ পরবর্তী শাটডাউন শুরু হয়েছে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে। কঠোর এ বিধিনিষেধ চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

এ সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ অনেক কিছু বন্ধ থাকায় কর্মচাঞ্চল্য কমে গেছে ব্যাপকভাবে। এর প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়েছে জামাল, আকবর কিংবা রহমতের মতো মানুষদের ওপর।

শাটডাউনের ষষ্ঠ দিনে বেড়েছে চলাচল

ঈদ-পরবর্তী শাটডাউনের ষষ্ঠ দিন বুধবার সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষের চলাচল চোখে পড়ার মতো। অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সবাই কোনো না কোনো কাজে ছুটছেন রাজধানীর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীবাসী ভিড় জমান স্থানীয় বাজারগুলোতে। আর কিছুটা সময় পর সড়কে বাড়তে থাকে খালি রিকশার চাপ। কারণ লকডাউনে শহরের সাধারণের বাহন বলতে এখন কেবল রিকশা।

খানিক বাদেই সেসব রিকশায় আরোহীদেরও দেখা যায়।

সাব্বির আহমেদ রিকশায় চড়ে কাকরাইল থেকে মোহাম্মদপুর যাবেন টিউশনি করাতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অভিভাবকের ইচ্ছায় বাসাতেই ছাত্রের সিলেবাস শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে লকডাউনেও ছুটতে হচ্ছে তাকে।

‘কী করার বলেন ভাই? আমার তো পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে হবে। টিউশনির টাকা দিয়ে ভেবেছিলাম কোনো রকম খেয়ে বাঁচব। কিন্তু সব টাকা তো চলে যাচ্ছে রিকশাওয়ালাদের পকেটে। মোহম্মদপুর যাচ্ছি ২৫০ টাকায়’, এভাবেই নিজের হতাশার কথা নিউজবাংলাকে জানান সাব্বির।

‘চাচা এত ভাড়া নেন কেন?’ প্রশ্ন করতেই দ্বিগুণ হতাশা আর ক্ষোভ মিশিয়ে উত্তর এলো, ‘আমরা গরিব দুই টাহা বেশি নিলেই দোষ? সারা দিনে কয়ডা খ্যাপ মারি সাথে সাথে থাইকা দেখেন। হেগোর (যাত্রীদের) বউ-বাচ্চা আছে। আমাগোর নাই? হেরা ভাত খায় আর আমরা মাডি খাই নাকি?’

কিছুটা শান্ত হয়ে রিকশাচালক মিজানুর রহমান জানান, লকডাউনে বাড়তি ভাড়া নিলেও ট্রিপ অনেক কম মিলছে। কারণ হিসেবে তিনি দেখছেন যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়াকে।

রিকশার পাশাপাশি সড়কে রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের চাপও।

চেকপোস্টের হালচাল

সকাল থেকেই রাজধানীর চেকপোস্টগুলোতে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান। সড়কগুলোতে দেখা যায় সেনাবাহিনীর টহলও।

তবে চেকপোস্টে পুলিশের অবস্থান সত্ত্বেও খুব একটা বাধার মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি রাস্তায় চলাচল করা সাধারণদের।

খুব সহজেই চেকপোস্টের বাধা পেরিয়ে যাচ্ছে আরোহী নিয়ে ছোট রিকশাগুলো। মাঝেমধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসার মুখে পড়ছে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির আরোহীরা।

এ চিত্র দেখা গেছে মৎস্যভবন, শাহবাগ, তেজগাঁও, ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি চেকপোস্ট ঘুরে।

এ বিভাগের আরো খবর