‘রাস্তার দুই পাশেই আমরা অনেক অফিসগোয়িং মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলাম। যে যার মতো করে রিকশা ডাকছিলেন। রিকশাওয়ালারা ভাড়া সিএনজির চেয়েও বেশি চান। ফলে প্রত্যেকে কিছুটা কম ভাড়ায় যেতে অন্য রিকশা থামাই। সব চালকরা যেন একজোট। কয়েকটা রিকশা আমাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তারা যাবে না। উল্টো আমাদের এই অবস্থা দেখে হাসাহাসি করছিল।’
কতটা দুর্ভোগ পেরিয়ে সোমবার পুরানা পল্টনে অফিসে যেতে হয়েছিল, তা-ই জানাচ্ছিলেন আয়কর বিভাগে কর্মরত সানজিদা মৌ।
তিনি একই দুর্ভোগে পড়েছেন মঙ্গলবারও। দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সকালে হওয়া বৃষ্টি।
দক্ষিণ বনশ্রী দশতলার (ইস্টার্ন বনবিথী শপিং কমপ্লেক্স) সামনে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ছাতা মাথায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মৌ।
তিনি বলেন, ‘আজও রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। দুই-একজন যেতে রাজি হলেও ভাড়া চাচ্ছেন কয়েক গুণ।’
মৌ আরও জানান, তিনি ঈদের আগে শাটডাউনের মধ্যে বনশ্রী থেকে পুরানা পল্টন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় যেতে পারতেন। কিন্তু ঈদের পর তার ২০০ থেকে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত লাগছে।
সকালে অফিস যাওয়ার সময় বেশি ভাড়া গুনতে হয় বলে জানান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী আলতাফ।
তিনি বলেন, ‘আমার অফিস নবাবপুর; থাকি পশ্চিম রামপুরা। পুরোটা পথ রিকশায় যাওয়া যায় না।
‘কিছুটা রিকশায়, কিছুটা হেঁটে, আবার রিকশা বা ভ্যানে করে যেতে হয়। প্রতিদিন ভাড়া বাবদ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হয়।’
অফিস যেতে মৌ ও আলতাফের মতো অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
ব্যক্তিগত গাড়ি বা অফিস থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা যাদের নেই তাদের সবাইকে এমন সংকটে পড়তে হচ্ছে।
তবে রিকশাচালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। রামপুরা ব্রিজে কথা হয় মানিক নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে।
ভাড়া বেশি চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো দেখতাছেন ভাড়া বেশি। দিনে কয়ডা পেসেঞ্জার পামু? একটু বেশি ভাড়া না অইলে ক্যামনে চলুম?’
ঈদের পর শুরু হওয়া কঠোর শাটডাউনে রিকশা সংকট দেখা দিয়েছে শহরজুড়েই। এর কারণ হিসেবে চালকরা বলছেন, ঈদের আগে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া তিন ভাগের এক ভাগ রিকশা চালকও ঢাকায় ফেরেননি। এ কারণে সড়কে আগের তুলনায় রিকশা কম।
চেকপোস্ট পরিস্থিতি
ঈদ পরবর্তী শাটডাউনের চতুর্থ দিনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। পাশাপাশি টহল ও চেকপোস্ট আছে র্যাব ও সেনাবাহিনীর।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে শেরেবাংলা নগর থানার চেকপোস্ট। ছবি: নিউজবাংলা
চেকপোস্টগুলোতে শুধু যানবাহন থামানো হচ্ছে। সকাল থেকে ৯টা পর্যন্ত জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ছাড়া বিনা কারণে রাস্তায় বের হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম।
বেলা বাড়লে যান ও মানুষের চলাচল আরও বাড়বে বলে মনে করছেন চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
রমনা জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক মাহবুব বলেন, ‘ব্যাংকার, চিকিৎসকসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের গাড়ি বেশি। এ ছাড়া টিকা বা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন এমন মানুষের চলাচলও আছে।
‘এর বাইরে যাদের গাড়ি রাস্তায় চলছে, তাদের কারণ সন্তোষজনক হলে ছেড়ে দিচ্ছি আমরা, না হলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শাটডাউন চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।