করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদ-পরবর্তী শাটডাউনের তৃতীয় দিন রোববার বাসা থেকে বেরিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী লোকজন।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় অনেককেই যেতে হয়েছে অফিসে। সড়কে বেরিয়ে গাড়ির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।
কেউ কেউ একমাত্র অবলম্বন রিকশা পেলেও ভাড়া কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় চড়তে পারেননি। কেউ কেউ আবার বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়াতেই গেছেন কর্মস্থলে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় খালার বাসায় থাকেন সৌমিক আহমেদ। কাজ করেন উত্তরার একটি ফ্রেড ফরওয়ার্ডিং কোম্পানিতে। সকালে গাড়ির অপেক্ষায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ মোড়ে।
নিউজবাংলাকে সৌমিক বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর আজকেই প্রথম অফিস খোলা। সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।
‘এদিকে অফিস উত্তরাতে। অফিস থেকেও গাড়ির কোনো সার্ভিস দিচ্ছে না। অফিস তো যেতে বলে খালাস। কিন্তু গাড়ি না চললে যাব কীভাবে? আর রিকশায় করে উত্তরা যেতে তো অনেক খরচের বিষয়।’
লকডাউনে অফিস খোলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে শিপমেন্ট পাঠাতে না পারলে বিদেশি বায়ারদের হারানোর ভয় থাকে। তারা সাধারণত সময়মতো মাল বুঝে পেতে চান। এখন সব কলকারখানা বন্ধ থাকলেও আগের শিপমেন্ট পাঠাতে হবে, যে কারণে অফিস খোলা।’
সৌমিক আহমেদের মতো অনেকেই সকালে দাঁড়িয়ে ছিলেন অফিসে যাওয়ার জন্য।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, কলেজ গেট, ফার্মগেট, মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, মতিঝিল, উত্তরা ও বাড্ডা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় অফিসগামী মানুষ গাড়ির অপেক্ষায় আছেন। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবানরা অফিসের গাড়িতে করে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পেরেছেন। বাকিদের জন্য ছিল অন্তহীন অপেক্ষা। যিনি রিকশাতেও চড়তে পারেননি, তিনি শেষ ভরসা হিসেবে হেঁটে রওনা হয়েছেন।
সাভার থেকে বাড্ডায় আসা এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুমন মিয়া বলেন, ‘ভাগ্য ভালো হওয়ায় অফিসের গাড়িতে আসতে পেরেছি। কিন্তু রাস্তায় অনেক মানুষকে হাঁটতে দেখলাম।
‘কেউ কেউ রিকশায় চড়তে পারছেন। কিন্তু যাদের প্রাইভেট কার বা রিকশায় যাওয়ার সুযোগ নেই, তারা হাঁটা ছাড়া আর কী করবেন?’
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরোপ করা সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকেই রাস্তায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সকালে কারওয়ান বাজার পাইকারি মার্কেটে একটু ভিড় দেখা যায়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি তেমন কাউকে মানতে দেখা যায়নি। চেকপোস্টও কিছুটা ঢিলেঢালা।
চেকপোস্টে নেই কড়াকড়ি
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুমি আহমেদ বলেন, ‘উত্তরা থেকে বাড্ডা আসার সময় রাজলক্ষ্মীর সামনে একটা চেকপোস্ট পাই। আর বাড্ডা এসে মধ্যবাড্ডা ইউলুপের সামনে আরেকটা চেকপোস্ট। চেকপোস্টে চলছে ঢিলেঢালা নজরদারি।
‘বাড্ডার চেকপোস্টে পুলিশ চেক না করে অলস সময় পার করছে। কোথাও তেমন কড়াকড়ি দেখি নাই।’
বাড্ডা ইউলুপের গোড়ায় চেকপোস্ট থাকলেও সেখানে কোনো গাড়ি ও মানুষকে চেক করতে দেখা যায়নি। চেকপোস্টের পাশে বসে পুলিশ সদস্যদের অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্টকে সার্বিক পরিস্থিতি জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।