ফাতেমা আক্তার। ছোট দুই সন্তান নিয়ে বসে আছেন সরদঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ১৩ নম্বর গেটের বাইরে। পাশে বেশ কয়েকটি ব্যাগ ও বস্তা। নিজের শিশু সন্তানকে বুকে আগলে ব্যাগ পাহারা দিচ্ছেন তিনি। চোখে মুখে হাজারও দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
ভোর ৬টা থেকে টানা চার ঘণ্টা বসে ছিলেন তিনি। স্বামী রিয়াজ গাড়ি খুঁজতে গেছেন। কয়েক ঘণ্টা পর স্বামী ফেরত আসলেও গাড়ির কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি।
এ অবস্থায় ফাতেমার দুশ্চিন্তা যেন আরও বেড়ে গেল। ছোট দুটি সন্তান নিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে এই চিন্তা যেন তাকে ছাড়ছে না।
কাছে যেতেই ফাতেমা তার কষ্টের কথা এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন।
ফাতেমা জানান, দুই সন্তান আর স্বামী রিয়াজকে নিয়ে থাকেন মিরপুরে একটি বস্তিতে। ২০১৯ সালে সেই বস্তিতে আগুন লেগে সহায়-সম্বল পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যান। আগুনের সেই ঘটনায় আহত হয়ে পরে মারা যান তার শ্বশুর জাহাঙ্গীর হোসেন। এরপর সব হারিয়ে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দেন ফাতেমার স্বামী রিয়াজ।
ঢাকায় কোনো রকম একটি চা দোকান খুলে ব্যবসা করেন রিয়াজ। এরপর আবার বস্তিতে মাথা গুঁজার ঠাঁই হলে ফের ফাতেমাকে নিয়ে আসেন রিয়াজ। ছোট চায়ের দোকান থেকে সীমিত আয়েই তাদের সংসার চলছিল। কিন্তু করোনার ছোবলে এখন বেঁচে থাকায় দায় বলে বলেন ফাতেমা।
টানা লকডাউন দেখে স্বামী রিয়াজ সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলায় চলে যান। কয়েক মাস ধরে গ্রামেও তেমন কাজ না থাকাই জীবিকার সন্ধানে আবারও ঢাকায় ফিরতে হয়েছে তাদের। কিন্তু ঢাকায় ফিরেই পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।
ফাতেমা বলেন, ‘গতকাল সকাল ১০টায় ভোলার লালমোহন থেকে লঞ্চে উঠি। আজকে ভোর ৬টায় এসে সদর ঘাটে নামি। কোনো গাড়ি না থাকায় চার ঘণ্টা ধরে ঘাটেই বসে আছি। আজকে মিরপুর যাইতে পারব কিনা বলতে পারছি না।’
ফাতেমা বলেন, ‘লকডাউনের সময়ে বাইচ্চা থাকার জন্য গ্রাম থেকে এক বস্তা চাউল, আটা নিয়া আইছি। এখন এই ব্যাগ বস্তা নিয়ে কিভাবে মিরপুর যাব।’
ফাতেমার মত আরও অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ ভোর সকালেই সদরঘাট এসে পৌঁছেন। কিন্তু ভোর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন। এতে অনেকেই গন্তব্যে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েন।
কেউ হেঁটে, কেউ বা ভ্যানগাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় ফিরছেন।