গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতির আবেদন করেছে পুলিশ।
পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে গত ১৯ জুলাই।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’
মামলার বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুশরাত জাহান তানিয়া সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তার মামলায় যদি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, তাহলে তিনি আদালতে নারাজি জানাবেন। অবশ্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টি বাদী জানেন কি না, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল কেটে দেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোল্লা আবুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল আনভীরের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম শহিদুল ইসলাম। সেই সঙ্গে ৩০ মের মধ্যে আদালতে মামলার প্রতিবেদন জমার আদেন দেন তিনি।
পরের দিনই মামলাটি থেকে আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আনভীর। যদিও এ বিষয়ে আর শুনানি হয়নি।
গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে এই তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের পর তার বোন বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন
যা হয়েছিল
গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মেয়েটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ওই দিন রাতেই গুলশান থানায় মামলা করেন তার বড় বোন নুশরাত জাহান তানিয়া। এতে আসামি করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে।
কলেজছাত্রী মুনিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।
পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের তখন জানান, ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ২৭ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে ওই তরুণীর দাফন হয়।
মামলার বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি আনভীরের সম্পর্ক দুই বছরের। এক বছর মুনিয়াকে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে রাখেন আনভীর। পরে মনোমালিন্য হলে মেয়েটি কুমিল্লায় চলে যান। পরে মার্চে ঢাকায় এসে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল একটি ইফতার পার্টি হয় ওই বাসায়। সেই পার্টির ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হলে মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের মনোমালিন্য হয়। পরে মুনিয়া তার বোনকে ফোন করে জানান, যেকোনো মুহূর্তে তার যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে।
এই ফোনের পর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন মুনিয়ার বোন নুশরাত। গুলশানের ফ্ল্যাটটির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পান তিনি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শোয়ার ঘরে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।