ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকার অনেক এলাকায় পশু কোরবানি চলছে। পুরান ঢাকায় সংখ্যাটা বেশি হলেও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও দেখা গেছে কোরবানির ব্যস্ততা। অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় দিন কোরবানি দিলেও আমেজ ঈদের দিনের মতোই।
ইসলাম ধর্মের বিধি মোতাবেক, ঈদের দিন ছাড়াও জিলহজ মাসের ১১ তারিখ (ঈদের দ্বিতীয় দিন) ও ১২ তারিখও (ঈদের তৃতীয় দিন) পশু কোরবানি করা যায়। আর এই বিধানের আলোকে দ্বিতীয় দিন অনেকে কোরবানির পশু জবাই করছেন।
বৃহস্পতিবার ঈদের দ্বিতীয় দিন পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলি ও প্রধান সড়কে পশু কোরবানি করতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে গাবতলী, গুলশান, মিরপুর, মৌচাক, উত্তরা, বনানী, বাড্ডাসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেকাংশজুড়ে আদি ঢাকা। ঈদের দ্বিতীয় দিন এসব এলাকায় কোরবানি দেয়ার রেওয়াজ অনেক আগে থেকেই। দ্বিতীয় দিন কোরবানির আমেজ সেখানে ঈদের দিনের মতোই।
গুলিস্থান, বংশাল, হাজারীবাগ, বকশিবাজার, আরমানীটোলা, মালিটোলা, এলাকায় ঈদের দিনের মত খুব সকালে পশু কোরবানি দিয়েছেন বাসিন্দারা। এসব এলাকায় প্রথম দিনও অনেক পশু কোরবানি হয়েছে।
সকালে গুলিস্থান মাজার পার হয়ে সদরঘাট যেতে চোখে পড়ে কোরবানির চিত্র। ঈদের দিন থেকে কোরবানির সংখ্যা কম হওয়াতে অল্প সময়ের মধ্যেই কাটাকুটির কাজ শেষ করে আবার বর্জ্য অপসারণ করে নিচ্ছেন কোরবানিদাতারা।
অনেকেই জানালেন, ঈদের দিন অন্যান্য ব্যস্ততা থাকে। আবার কসাই পাওয়া যায় না অথবা একই পরিবারের অন্য কেউ কোরবানি দেয়াতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বেছে নেন তারা। অনেকে আবার পারিবারিক কারণে দ্বিতীয় দিন কোরবানি দিচ্ছেন।
আরমানিটোলা এলাকায় মাঠের পাশেই কোরবানি চলছে। কোরবানিদাতা নাম না জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক আত্মীয় রয়েছে। কাল বড় ভাই কোরবানি দিয়েছেন। তাই আজ আমি দিচ্ছি।’
গুলিস্থান প্রধান সড়কে কোরবানি দিচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার ঈদের পরদিন কোরবানি দেয়। আব্বু আম্মু এখন পর্যন্ত তাই জানিয়েছে।’
ঈদের দিন কী করেছিলেন জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, ‘ঈদের দিন আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। রাতে বাসায় ফিরেছি। বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছি।’
অনেকেই আবার জানালেন, ঈদের আনন্দ ধরে রাখতে দ্বিতীয় দিন কোরবানি দিতে তাদের মধ্যে ভালোলাগা কাজ করে। আবার দ্বিতীয় দিন কোরবানির খরচ কম থাকে।
মালিটোলা এলাকার বাসিন্দা শরীফুল বলেন, ‘গরু কিনছি ঈদের আগের রাতে। ঈদের দিন কসাই টাকা বেশি চায়। ডিমান্ড থাকে। আর ঈদের পরের দুইদিনও কোরবানি দেয়া যায়। এজন্য আজ দিচ্ছি। কসাই টাকা কম নিচ্ছে আর ময়লা কম হবে।’
পুরান ঢাকার মতো নতুন ঢাকাতেও এখন অনেকেই এ রীতি অনুসরণ করছেন। মূলত কসাইয়ের অতিরিক্ত মজুরি আর সংকটের কারণেও ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানির জন্য বেছে নিয়েছেন তারা।
বারিধারা এলাকার বাড়ির সামনে রাস্তার পাশেই কোরবানির পশু জবাই করেছেন শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আত্মীয় স্বজনদের বাসায় ঘুরেছি। আজ কোরবানি দিচ্ছি। কসাই খরচও কম।’
উত্তর বাড্ডার সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দিন একটা গরু জবাই করেছি। আজ আরেকটি দিচ্ছি। ঈদের দ্বিতীয় দিন হলেও ঈদের দিনের মতোই লাগছে।’
সিটি করপোরেশনে কোরবানি দেয়ার জন্য নির্ধারিত জায়গা না থাকায় ঈদের দ্বিতীয় দিনও রাস্তা ও অলিগলির বাসার সামনেই কোরবানি দিচ্ছেন বাসিন্দারা। তবে বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের তৎপরতা দেখা গেছে। কোরবানির পর বর্জ্য নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছেন তারা।
বুধবার সারা দেশে পালিত হয় মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনাভাইরাস ঝুঁকির মধ্যেই পালন করা হয় এই উৎসব।