কোরবানির ঈদ এলেই একদল মানুষ রাজধানীর অলিগলি, মোড়ে মোড়ে ঘুরতে থাকেন। তাদের মাথায় ছোট্ট পুঁটলি। যার ভেতরে রাখা ছুরি, বঁটি, কুড়াল, চাপাতি। এরা এক দিনের কসাই। সারা বছর বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশায় জড়িত থাকলেও তারা মাংস তৈরির কাজ করেন কোরবানির দিনে।
এক দিনের কসাইদের আয় কিন্তু কম নয়, দুই থেকে তিনজনের দল এক দিনে আয় করেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কখনো কখনো আরও বেশি। বাড়তি হিসেবে দিন শেষে মাংস নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। যদিও কখনো কখনো দুর্ঘটনায় পড়তে হয় অসতর্কতায়।
ঢাকার দুই সিটিতে প্রতিবছর কত পশু কোরবানি হয়, এর কোনো ধরাবাঁধা পরিসংখ্যান নেই। তবে আনুমানিকভাবে এই সংখ্যা ১০ লাখ হতে পারে বলে ধারণা। যে পরিমাণ পশু রাজধানীতে কোরবানি হয়ে থাকে, তা কাটার মতো লোকবল ঢাকাতে থাকেন না। এ জন্যই এক দিনের জন্য অন্য পেশার লোকদের করতে হয় কসাইয়ের কাজ।
মহল্লায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন, মোহাম্মদ সজীব, শাজাহান ও আরিফুল ইসলাম। রাজধানীর বিমানবন্দরসংলগ্ন দলিপাড়ায় থাকেন তারা। তিনজনের বাড়িই জামালপুরের ধনবাড়ি এলাকায়। উত্তরা ৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে গরু কাটার কাজ নিয়েছেন এই তিন বন্ধু।
নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সজীব জানান, প্রতিবছরই এই কাজ করেন তারা। এতে আয়ও খারাপ না। গরু কাটার পারিশ্রমিক হিসেবে তারা হাজারে ১০০ টাকা নিয়ে থাকেন। এবারের ঈদে তারা তিনটি গরু ঠিক করেছেন। যার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে তাদের আয়ও দাঁড়াবে ২৪ হাজার টাকা। এরপরও মিলবে কিছু বকশিশ ও মাংস।
তিনি বলেন, কাজটা সহজ না। তিনটি গরু কাটতে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে।
জাহাঙ্গীর আলম পেশায় সিএনজিচালক। এবারে ঈদের দিনে তিনি গরু কাটছেন দুই চাচাতো ভাই লাভলু ও বাবলুর সঙ্গে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা দুটো গরু ঠিক করেছি। ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার। সে হিসাবে আমাদের আয় হবে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। ভাগে পাব ৪ হাজারেরও বেশি করে। সেই সঙ্গে মিলবে মাংস ও বকশিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে কখনো এই কাজ করিনি। কিন্তু এবার চাচাতো ভাইদের পরামর্শে কাজে যোগ দিয়েছি। তবে আমি তাদের মতো এক্সপার্ট না, ভয়ও লাগে।’
অপেশাদার কসাইদের কাজের ওপর কোরবানির পশুর মালিকরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট থাকেন না। কিন্তু বাধ্য হয়েই মৌসুমি কারবারিদের সহায়তা নিতে হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রিপন কবীল লস্কর বলেন, ‘এদের সার্ভিস চার্জটা তুলনামূলক বেশি। আপনি যদি ২ লাখ টাকার গরু কেনেন, এদের মাংস কাটতে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। এটা অযৌক্তিক। অদক্ষতায় তারা মাংসের সাইজ ছোট বড় করে ফেলে, চামড়া নষ্ট করে। আর সময়মতো কাজ শেষ করতে পারে না।’
এ রকম নানা অভিযোগ থাকলেও শহুরে জীবনে এসব মানুষের সহযোগিতায় কোরবানি দেয়া সহজ হয়েছে নগরবাসীর।