কোরবানির পশুর বাজারে এবার শুরু থেকেই ছিল মন্দা। ঈদের আগের দিন আরও খারাপ হয়েছে। ফলে অবিক্রীত পশু নিয়ে ঈদের সকালে রাজধানী ছেড়েছেন অসংখ্য ব্যবসায়ী।
রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে হতাশার চিত্র। সকাল থেকেই ট্রাকে করে গরু নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন অনেক ব্যাপারী। কেউবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রাকের অপেক্ষায়।
গাবতলী গরুর হাটে বুধবার সকালে কথা হয় আলাউদ্দিন খলিফার সঙ্গে। এবার পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছিলেন কুষ্টিয়া থেকে, যার মধ্যে বিক্রি হয়েছে দুটি। বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন তিনটি গরু।
আলাউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে সক্কাল থেইকা ব্যাপারীরা অন্তত ২০০ ট্রাকে গরু নিয়ে গাবতলী থেইকা চইলা গেছে। এই বছর হাটের অবস্থা খারাপ। করোনার লাইগা মানুষ কোরবানি কম দিছে। খরিদ্দাররা অর্ধেক দাম কয়। এই রকম অবস্থা হবে জানলে আসতাম না।’
তিনি বলেন, ‘৬০ হাজার টাকা দিয়া গরু আইনা ৭০ হাজারে বিক্রি করছি দুইটা। বাকি তিনডার দাম কয় ৩০-৪০ হাজার। ১২ হাজার আনতে আর যাইতে ৬ হাজার খরচ। ঢাকা আইসা সব দিয়া মোট ২৫ হাজার খরচ হইছে।’
ঝিনাইদহ থেকে দুটি বড় গরু নিয়ে এসেছিলেন কবির হোসেন। পথে দীর্ঘ যানজটের পড়ে ২১ মণের একটি গরুর পায়ে ব্যথা পাওয়ায় উঠে দাঁড়াতে পারছে না। এ কারণে সেটি বিক্রি হয়নি।
কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুইটা গরু নিয়ে আইছিলাম। একটা ৩০ মণ, আরেকটা ২১ মণ। ৩০ মণেরটা ৫ লাখে বিক্রি করছি। ২১ মণের গরুটা আনার সময় দেড় দিন পথে ছিল। কীভাবে যেন পায়ে ব্যথা পায়। তাই বিক্রিও হয় নাই। এইটা ফেরত নিয়ে যাচ্ছি বাড়ি। সুস্থ করে পরে বিক্রি করব। দুই গরু ঢাকা আনতে অনেক টাকা খরচ হইছে।’
ব্যবসায়ীদের অনেকে বেশি লাভের আশায় প্রথম দিকে গরু বিক্রি করেননি। তাদের সবার এখন মাথায় হাত। পিরোজপুরের রাসেল হাওলাদারের ৩২ মণের গরুর দাম ঈদের চার দিন আগে উঠেছিল ৭ লাখ টাকা। তবে সে সময় তিনি বিক্রি করেননি।
রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাবছিলাম আরও দাম বাড়বে, কিন্তু বাড়ে নাই। এখন দাম বলে সাড়ে ৩ লাখ। ৪ লাখ টাকা হলেই এখন দিয়ে দিতাম।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ঈদটা মাটি হয়ে গেছে ভাই। গরুটা আপ-ডাউন, নিজের খাওয়া, সব মিলিয়ে ৫০ হাজার খরচ। মাথায় বাড়ি পড়ে গেছে ভাই।’
নাটোরের রাহাত ডেইরি ফার্ম থেকে এসেছিল ৩৮টা গরু, ঈদের দিন তারা ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ২৩টি।
খামারি রজবিল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাটের শেষ দুই দিন খুব খারাপ গেছে। প্রথম চার-পাঁচ দিন ভালো ছিল। সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা লস। এখনও বাড়ি যেতে পারি নাই। আমার ঈদ নাই, বউ ছল মাইয়া কাঁনতেছে।’
এত গরু ফেরত নিয়ে যাওয়ার পর কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে যেয়ে ছয় মাস খাওয়াইয়া তার পরে বিক্রি করব। বাৎসরিক ওরস, ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিক্রি হবে এগুলো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসিল ঘরের একজন বলেন, ‘প্রতিবছরই কিছু গরু ফেরত যায়। তবে এবার পরিস্থিতি বেশ খারাপ। মহামারির কারণে মানুষ এখন আগের মতো কোরবানি দেয় না। এ বছর গরু বেশি ছিল, ক্রেতা কম। তাই বেশি ফেরত যাচ্ছে।’