বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পশু জবাইয়ের স্থান ঢাকা উত্তরে আছে, দক্ষিণে নেই

  •    
  • ২০ জুলাই, ২০২১ ২১:৫৯

এবার উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পশুর বর্জ্য সরানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দুই সিটি থেকেই। তবে দক্ষিণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্যোগ থাকলেও পশু কোরবানি দেয়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় চার লাখ পশু কোরবানি দেয়া হবে এবার।

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় চার লাখ পশু কোরবানি দেয়া হবে এবার। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পশু জবাই নিয়ে সিটি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নিয়ে নগরীতে দুই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা জানতে পেরেছে এবার উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পশুর বর্জ্য সরানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দুই সিটি থেকেই। তবে দক্ষিণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্যোগ থাকলেও পশু কোরবানি দেয়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।

অন্যদিকে নির্ধারিত স্থান থাকলেও সেখানে অনেকেই পশু নিয়ে যেতে চান না। আবার অভিজাত এলাকায় যেভাবে বর্জ্য সরানো হবে, ঠিক সেভাবে বস্তি বা নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকছে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ৩০৭টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে কোরবানি দেয়ার জন্য। তবে অনেকেই এই বিষয়ে জানলেও তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি দিতে চান।

সিটি করপোরেশন থেকে জানান হয়েছে, ৩০৭টি স্থানে নগরবাসীর জন্যে পশু কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাস্তার ওপর কিংবা ড্রেনের পাশে কোরবানি না করার জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা। এ ছাড়া কোরবানির জন্য সর্বমোট ২৫০ জন ইমাম ও ২৫০ জন মাংস প্রস্ত্ততকারীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে তারা।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে পশু কোরবানি দেয়ার জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান নেই। তবে পশুর হাটগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে মাঠপর্যায়ে তদারকির জন্য ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে এই টিমগুলো গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, ‘আমরা এবার এটি বাদ দিয়েছি। আমাদের কোনো নির্ধারিত স্থান নেই। এটা আমাদের করপোরেশনের বোর্ড সভা থেকেই কাউন্সিলরবৃন্দ বাদ দিয়েছেন।’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে এমন ব্যবস্থা ছিল। তবে সেখানে কোরবানদাতারা যান না। বরং এটা সমালোচনার খোরাক হয়। এখন এমন জায়গা বানানোর পর সেখানে না গেলে অর্থের অপচয় হয়। এই কারণে আমরা এটাকে বাদ দিয়েছি।’

উত্তর সিটি করপোরেশনে এমন উদ্যোগ থাকলেও বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন তারা সেখানে যাবেন না। এর কারণ হিসেবে কোরবানিদাতাদের অনেকেই জানিয়েছেন পশু জবাইয়ের সময় তারা পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ জন্য অনেকেই বাসার আঙিনায় কোরবানি দিয়ে থাকেন।

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বুধবার কোরবানি দেয়া হবে। নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষের বাস এই বস্তিতে। একা একটি পশু কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য না থাকলেও অনেকে মিলে ভাগাভাগি করে কোরবানি দেবেন তারা। আবার অনেকে আজই গরু জবাই করেছেন।

প্রশ্ন ছিল আজ ও কাল মিলিয়ে বস্তিতে এত বর্জ্য তৈরি হলে সেগুলো কীভাবে তারা সরাবেন।

কড়াইল বস্তিতে মঙ্গলবারও অনেকেই পশু জবাই করেছেন। এমন একজন জামাল হাসান। অনেকেই তার সঙ্গে রয়েছেন।

অভিজাত এলাকায় যেভাবে বর্জ্য সরানো হবে ঠিক সেভাবে বস্তি বা নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকছে না। ছবি:নিউজবাংলা

কীভাবে কোরবানি দেবেন জানতে চাইলে জামাল বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কোরবানি দেব। মঙ্গলবার একটা গরু জবাই করেছি ভাগাভাগি করে।’

সিটি করপোরেশন থেকে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটি জানেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলনে, ‘আমরা জানি। তবে আমরা এখানেই পশু জবাই করেছি। এই এলাকায় যারা কোরবানি দেবে তারা নিজেদের বাড়িতে দেবে। তবে জবাইয়ের জন্য তারা কোনও কসাই ভাড়া নেননি। নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পশু জবাই দিয়েছেন।’

সিটি করপোরেশন থেকে কোরবানির আগে কী ধরনের সুবিধা পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো তেমন কিছু বলা হয় না। আমরা কোরবানি বা পশু জবাই দেয়ার পর নিজেরাই তা পরিষ্কার করে থাকি। রাস্তার পাশে বস্তায় ময়লা ভরে রেখে দিলে তা সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যায়। এইটুকুই।’

একই রকম কথা জানালেন মো. আনোয়ার। নিজের ব্যবস্থাপনায় তিনি কোরবানি দেবেন। সেটি তিনি তার বাড়িতে দেবেন। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গা সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তেমন কিছু তিনি জানেন না। তিনিও রাস্তার পাশে বস্তায় বর্জ্য ফেলে রাখবে। গাড়ি এসে নিয়ে যাবে।

বস্তির এসব লোক কোরবানির এত ব্যবস্থাপনা নিয়ে ধারণা না রাখলেও সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুশি রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা।

বনানী এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের ম্যানেজার মো. রনি নিউজবাংলাকে বলেন, তার ভবনে ১৪টি গরু ও ১৬টি ছাগল কোরবানি দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে সব ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। বস্তা, পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার পেয়েছি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের টিম মাঠে আছে। প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছে। তবে তারা সব পশু নিজেদের ভবনে থাকা গ্যারেজে কোরবানি দেবেন।’

রনি বলেন, বেইজমেন্টেই কোরবানি দেয়া হবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলো অনেক দূরে। কোরবানির পশুর মাংস ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়ায় কষ্ট হয়ে যাবে।

উত্তর সিটি করপোরেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভিড় করেছেন অনেকেই। যারা কোরবানির বর্জ্য অপসারণসহ অন্যান্য বিষয়ের জানতে সিটি করপোরেশনে ভিড় করেছেন।

মিরপুর থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে সিটি করপোরেশনে এসেছেন তানভীর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জীবাণুনাশক থেকে শুরু করে বস্তা, পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার নিয়েছি এখান থেকে। আমরা আমাদের বাড়িতেই কোরবানি দিব। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলো বাসা থেকে দূরে। কোরবানির পশুর মাংস ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে ঝামেলা হয়।’

তানভীর বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কমিশনার নিজে কোরবানির বিষয়ে তদারকি করছেন। এইগুলো যা নিয়ে যাচ্ছি সেগুলো দিয়ে প্রয়োজন না সারলে আবারও বেশি করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।’

কী ব্যবস্থা নিয়েছে সিটি করপোরেশন

ডিএসসিসি থেকে জানা গেছে, ৯০টি খোলা ট্রাক, ৫৩টি কম্পেক্টর, ১২টি পানির গাড়ি, ১০২টি ডাম্প ট্রাক, ১৪টি পে-লোডার, ৮১টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ৯টি টায়ার ডোজার, ২টি ট্রেইলার, ৯টি স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪০০ যান-যন্ত্রপাতি মাঠপর্যায়ে বর্জ্য সরানোর কার্যক্রমে যুক্ত থাকবে।

এবার উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পশুর বর্জ্য সরানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দুই সিটি থেকেই। তবে দক্ষিণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্যোগ থাকলেও পশু কোরবানি দেয়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

আবু নাসের জানান, তাদের নিয়মিত ৫ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার কর্মী কোরবানির পশুর বর্জ্য সরানোর কাজে নিযুক্ত থাকবেন। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতি কাউন্সিলরকে ১ হাজার করে এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের ১ হাজার ৫০০টি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ দেয়া হয়েছে। এসব থলে যারা কোরবানি করবেন তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। পশুর বর্জ্য সেসব ব্যাগের মধ্যে ভরে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের কাছে হস্তান্তর করবেন।

পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে প্রায় ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ১ হাজার ৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হবে।

অন্যদিকে উত্তরের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দুই দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক (খোলা ট্রাক), ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপ ভ্যানসহ সর্বমোট ৪৯৩টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে।

এ ছাড়া ১১টি ওয়াটার বাউজার দিয়ে তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলরদের সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার, ৫ হাজার ক্যান (প্রতিটি ৫ লিটার) স্যাভলন দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর