ঢাকা শহরে এবারই প্রথম কোরবানি দিচ্ছেন মাহমুদুল হাসান সৈকত। প্রতিবছর গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উদযাপন করলেও এবার যেতে পারছেন না করোনার কারণে।
তবে বাড়িতে না গেলেও কোরবানি দেয়া থেমে নেই। ঢাকার বসুন্ধরার বাসাতেই পশু কোরবানি দিচ্ছে সৈকতের পরিবার।
কেমন খরচ হতে পাবে ঢাকায় কোরবানি দিতে- এমন প্রশ্নে সৈকত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামে সাধারণত সাপ্তাহিক হাট বা গৃহস্থের বাড়ি থেকে গরু কেনা হয়। ঢাকায় গরু কিনেছি হাটে গিয়ে। এবারই প্রথম দুই ভাই ও ভাইয়ের বউ মিলে হাটে গিয়ে পছন্দ করে গরু কিনেছি। দাম পড়ল ৭২ হাজার টাকা। আর ৩৬০০ টাকা খরচ হলো হাসিলে।’
আফতাব নগরের হাট থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সৈকতের বাসায় গরু আনতে পিকআপ ভাড়া লেগেছে ২৬০০ টাকা। এ ছাড়া গরুর খাবার কিনতে ব্যয় হয়েছে ৩০০ টাকা।
‘গরু কাটার খাটিয়ায় খরচ হয়েছে ৩০০, পাটি বা চাটাই ৩০০ টাকা। এর বাইরে কসাইকে দিতে হবে হাজারে ১০০ টাকা করে। সে হিসাবে ৭ হাজার ২০০ টাকা। জবাইয়ের জন্য দিতে হবে আনুমানিক ২০০ টাকা। গরু দেখভালের জন্য দারোয়ানের বকশিশ আনুমানিক ৫০০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘৭২ হাজার টাকার গরু কোরবানি দিতে সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে আরও ১৪ হাজার ৮০০ টাকা।’
সৈকত বলেন, ‘গ্রামে সাধারণত গরু কোরবানিতে কোনো খরচ নেই। পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশী ও স্বজন এসে জবাইয়ের পর ভাগের মাংস নিয়ে যান, নগদ টাকা নেন না।’
গার্মেন্ট ব্যবসায়ী হাসান জামিল খন্দকার থাকেন উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরে। প্রতিবছরই তিনি ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক পশু কোরবানি দেন। এবারও বাসায় দুটি গরু কোরবানি দিচ্ছেন।
গাজীপুরের একটি খামার থেকে গরু কিনেছেন হাসান জামিল। দাম চার লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, গরু দুটি ঈদের দিন সকালে বাসায় পৌঁছে দেবে খামার কর্তৃপক্ষ। এ কারণে গরুর দামের সঙ্গে ঈদ পর্যন্ত পালন এবং পরিবহন খরচ নিয়েছেন খামারি।
হাসান জামিল বলেন, ‘তবে খরচ দিতে হবে গরু জবাই, মাংস তৈরিতে। এ জন্য কসাইদের বরাবরই হাজারে ১০০ টাকা দিতে হয়। চার লাখ টাকার গরুতে তাই খরচ দিতে হবে ৪০ হাজার টাকা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরেই আমার গরু জবাইয়ের লোকজন নির্ধারিত। তারা হিসাব করেই টাকা নিয়ে যায়, এটাও কোরবানির অংশ। তারা খুশি হলে আমিও খুশি। ওদের ঠকানোর চিন্তা করি না।’
মহাখালী ডিওএইচএসের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জিয়াউল হক এবার প্রথম অনলাইনে গরু কিনেছেন। গরু বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানই পশু কোরবানির পুরো দায়িত্ব নিয়েছে।
জিয়াউল বলেন, ‘গরু কিনেছি লাইভ ওয়েট অনুযায়ী। ৩৮০ টাকা দর পড়েছে প্রতি কেজিতে। ফলে ৩৫০ কেজি ওজনের গরুর দাম পড়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
‘অন্যদিকে স্লটারিং খরচ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা। সে হিসাবে জবাই ও মাংস তৈরির খরচ পড়েছে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে কোরবানির খরচ পড়ছে এক লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। কোরবানির পর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানই মাংস বাসায় পৌঁছে দেবে।’