গ্রামের বাড়িতে যে গরুর দাম ৭ লাখ টাকা কইছে, সেই গরু ঢাকার হাটে এখন দুই, আড়াই লাখ টাকাও কয় (বলছে) না। দাম পড়ে গেছে, বড় গরুতে বেশি লস হবে। কাস্টমার দামই বলছে না, এমনটিই জানালেন গরু বিক্রেতা রাহাত মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগর থানার বাসিন্দা রাহাত মিয়া বেশ বড় আকারে দুটি গরু নিয়ে রামপুরা আফতাব নগর হাটে এসেছেন দুই দিন আগে।
তিনি জানান, একেকটি গরুর ওজন ২০ মণ। গ্রামে দুটির দাম উঠেছিল ১৪ লাখ টাকা। তিনি বিক্রি করেননি। আশা ছিল ঢাকায় আনলে একেকটা ১০ লাখে বেচা যাবে। কিন্তু ঈদের আগের দিন দুপুর পর্যন্ত কেউ দামই বলেনি।
মঙ্গলবার রামপুরা, আফতাব নগর ও মেরাদিয়া হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে গরুর দাম অনেকটা কম।
ছোট বা মাঝারি আকারের গরু কিছুটা বিক্রি হলেও বড় গরুর দিকে নজরই দিচ্ছেন না ক্রেতারা। গরু বিক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
রাজধানীর আফতাবনগর পশুর হাট
গরুর বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ঈদের আগের দিন গরুর দাম অনেক চড়া ছিল। সে আশায় এবারও বিক্রেতারা প্রথম দিকে ভালো দাম বললেও গরু ছাড়েননি। তবে অনেকেই প্রথম দিকে গরু বিক্রি করে কিছুটা লাভও করেছেন।
কিন্তু ঈদের আগের দিন যখন কেনাবেচা তুঙ্গে, তখন দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসানের কথা বলছেন ক্রেতারা।
এবার হাটে গরুর সরবরাহ প্রচুর। করোনাকালে মানুষকে বাড়িতে যেতে দেয়া হবে না, এই হিসাব করেই ব্যাপারীরা এবার পশু নিয়ে এসেছেন বেশি। কিন্তু শেষ সময়ে সরকার বাড়ি যেতে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর লাখ লাখ মানুষ ছেড়ে গেছেন রাজধানী। ফলে চাহিদা গেছে কমে।
গত শনিবার থেকে রাজধানীর পশুর হাটগুলো চালু হয়। তবে প্রথম কয়েক দিন ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই একে অপরকে যাচাই করেছেন। মূল কেনাকাটা শুরু মূলত গত রাত থেকে। আর বিক্রি আরও বেড়েছে আগের দিন। আর এই পর্যায়েই পড়ে গেছে দাম।
আফতাবনগর হাটের ইজারাদার ওমর শরীফ দিপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার গরুর বাজার একেবারেই ভালো না। বেচা-বিক্রি একেবারেই কম। বাজার এমন থাকলে ব্যাপারীদের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি আমাদেরও অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। বিক্রি কম হলে তো হাসিলও কম আদায় হবে। তবে আজ সন্ধ্যার দিকে যদি ক্রেতা বাড়ে তাহলে হয়তো দাম কিছুটা বাড়তে পারে।’
বিক্রেতারা হতাশ
পাবনার চাটমোহর থেকে ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম। চারটি ছোট আকারের গরু বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু বড় দুটি বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেইক্যা গরু দুটি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ায় আছি। কোনো রকম গরু দুটি বিক্রি করতে পারলেই চলে যাব। কিন্তু কাস্টমার কেনা দামও কচ্ছে না। বাজার এমন থাকলে গরু দুইটাকে মনে হয় বাড়ি নিয়ে যেতে হবে।’
পাশেই সবকিছু গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন কুষ্টিয়ার সাদ রহমান। চোখেমুখে হতাশার ছাপ। জানান, ১২টা গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন। এর মধ্যে ১১টাই বিক্রি হয়েছে।
তার পরে কেন হতাশা?
কারণ, প্রতিটি গরুই বিক্রি হয়েছে লোকসানে।
আরেক বিক্রেতা ফরিদপুরের আলম ব্যাপারী সাতটা গরু নিয়ে এসেছেন। প্রথম দিকে ভালো দাম বললেও বিক্রি না করে এখন ক্ষতি কমানোর হিসাব কষছেন।
বলেন, ‘দুই দিন আগে সাতটি গরু নিয়া আইছি। গতকাল ভালোই দাম বলছিল। আরও বেশি দামে বেচার আশায় ছাড়ি নাই। কিন্তু আইজকা তো দেহি কাস্টমারই নাই।’
তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৬০ হাজার টাকার গরু মাত্র ৮০ হাজার টাকা কয়। এত লস করে ক্যামনে বেচি বলেন? দরকার হইলে বাড়ি নিয়া যাব, তারপরও এত লস দিয়া গরু বিক্রি করব না।’
একই অবস্থা দেখা গেছে বনশ্রীর মেরাদিয়া হাটেও। ক্রেতার তুলনায় গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রখর রোদের মধ্যে বিক্রেতারা গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এক ধরনের হতাশা দেখা গেছে তাদের মধ্যে।
বিক্রেতা জাকারিয়া লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন চালান বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। কোনোটা সীমিত লাভে, কোনোটা কিছুটা লোকসানে ছেড়ে দিচ্ছেন।
দারুণ খুশি ক্রেতারা
১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে বেজায় খুশি মধ্যবাড্ডার বাসিন্দা রাজন মিয়া। বলেন, ‘আজকে যেটা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনছি, গতকাল সেটা দুই লাখ টাকায়ও ছাড়েনি।‘
তবে হাটে গরুর তুলনায় ছাগলের দাম বেশ ভালো।
ছাগল বিক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, ৭০টা ছাগল এনেছিলেন। তার মধ্যে ৫০টার মতো বিক্রি হয়ে গেছে। সেগুলো ভালো দামেই বিক্রি করেছেন।