সিটি করপোরেশনের ড্রেন-নর্দমায় মশা জন্মালে জনগণ কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
রোববার সকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও ম্যাক্স গ্রুপের অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
হানিফ বলেন, ‘করোনার পাশাপাশি নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু যেন মহামারি রূপ না নেয় সেজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
‘বাসাবাড়িতে পানি জমে এডিস মশা সৃষ্টি হচ্ছে কি না এজন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন মানুষকে সচেতন করার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল কাজ। তবে আপনি একটা বাড়িতে বা একটা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পানি জমছে কিনা তা পরিদর্শন করছেন, জরিমানা করছেন কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে শত শত ড্রেন নর্দমা আছে, সেখান থেকে অসংখ্য মশা জন্ম নিচ্ছে। সেজন্য জনগণ কার বিরুদ্ধে মামলা করবে, কাকে ফাইন করবে?’
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি
বাড়িতে বাড়িতে জরিমানা করার পাশাপাশি ড্রেন নর্দমাতে নিয়মিত মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছেটানোতে দুই মেয়রকে পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা। হানিফ বলেন, ‘একটা একটা বাড়িতে গিয়ে অভিযান বা পরিদর্শন করা, জরিমানা করা এটা সমাধান নয়। সমাধানের জন্য মেয়ের সাহেবদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘সিটি করপোরেশনে যে ড্রেন নর্দমা খাল আছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে মশার ওষুধ দিতে হবে। মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এই করোনার মধ্যে ডেঙ্গু মহামারি রূপে দেখা দিতে পারে।’
এ সময় করোনায় বিপর্যস্থ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিল্পপতিদের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, ‘করোনায় দুর্যোগে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের মত ধনী দেশে সাত লাখ মানুষ মারা গিয়েছে। এই সময়ে সরকারের পাশাপাশি শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে তাদের ব্যবসায়ীরা, শিল্পপতিরা মানুষ ও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশের শিল্পপতিরা মানুষের পাশে সেভাবে দাঁড়িয়েছে বলে জনগণ দেখছে না।
‘শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। আমাদের যে সম্পদ আছে তা নিয়েই সবাইকে একসঙ্গে করোনা নামের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। জীবন ও জীবিকা দুটোর মধ্যে সমন্বয় রেখে শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবেলায় আমরা সফল হচ্ছি।’
করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ধর্মীয় বক্তাদেরও সমালোচনা করেন তিনি। হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণকে মাস্ক পরতে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছেন। তার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী করোনার শুরু থেকেই মানুষকে সচেতন করেছেন। কতিপয় রাজনীতিবিদ তখন প্রেসক্লাবের সামনে হাজারো মানুষ নিয়ে সমাবেশ করেছে। তারা করোনা ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতা করেছে।
‘এছাড়া তথাকথিত আলেম নামধারী বক্তা সুপরিকল্পিতভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। তারা এমনও বলেছে করোনা আসবেনা, বাংলাদেশে আসবেনা, যদি আসে তবে কোরআন মিথ্যা হবে। এদের এই মিথ্যা প্রচারণায় গ্রামের সহজ সরল মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। মাস্ক পরতে শিথিলতা দেখা গেছে সেখানে। এই ভন্ড রাজনীতিবিদ ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা থেকে মুক্তি পেতে দুটি পথ খোলা আছে। সবাইকে টিকা দিতে হবে। এতে এন্টিবডি তৈরি হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে আশা করি। এর আগে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরুন, নিজে সুরক্ষিত হন, অন্যের জীবন সুরক্ষিত করতে সহায়তা করুন।
‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। যেকোনো সমস্যায় জনগণ আওয়ামী লীগকে পেয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে জনগণের পাশে থেকেছে। গতবছর করোনা শুরু হওয়ার পর যখন মানুষ মৃত আত্মীয়ের সৎকারে যায়নি, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়েছেন।’
‘আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে, মাস্ক, অক্সিজেন সরবরাহ করছে। কৃষকের ধানও কেটে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা বিশ্বের চেয়ে অনেকটা স্বস্তিকর অবস্থায় আছি। সবাইকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।'