রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি বাসায় ১২ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের মামলায় তানভীর আহসান পাভেল ও নাহিদ জাহান আঁখিকে এক দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম আবু সাঈদ রোববার এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিলসহ জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মকবুল হোসেন মিয়া রিমান্ডের পক্ষে ও জামিনের বিরোধিতা করেন।
তিনি তার বক্তব্যে আদালতকে বলেন, একটি কিশোরী মেয়ে যে বয়সে তার হাসিখুশিমাখা মুখ নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা। সংসারের অভাব-অনটন ঘোচাতে সে গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিল। সেখানে এই গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তা তার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করেছেন, আদালতে তার প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক এই দম্পতিকে এক দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম আবু সাঈদ রিমান্ড শুনানির জন্য রোববার দিন রেখেছিলেন।
গত ৬ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই (নি.) জাহাঙ্গীর হোসেন ৫৪ ধারায় আসামি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখার রাখার আবেদন করেন। এরপর কারাগারে থাকা এই দম্পতিকে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। গত বৃহস্পতিবার আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে রিমান্ডে দিন রাখে আদালত।
গৃহকর্মী সুইটিকে নির্যাতনের ঘটনায় বাবা শহিদ মিয়া বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় তানভীর আহসান পাভেল ও নাহিদ জাহান আঁখিকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, অভাবের কারণে ৯ মাস আগে সুইটিকে পাভেল-আঁখির বাসার কাজে পাঠায় তার পরিবার। তার মাসিক বেতন ধরা হয় ৩ হাজার টাকা। দুই মাসের বেতন শহিদ মিয়া নিয়ে যান। এরপর সাত মাসে আর কোনো টাকা দিতেন না আসামিরা।
এমনকি সুইটিকে দেখতে এলেও দেখা করতে বা ফোনে কথা বলতে দেননি আসামিরা। ঠিকমতো কাজ না করার অজুহাতে পাভেল ও আঁখি কারণে-অকারণে সুইটিকে দীর্ঘদিন যাবৎ অমানবিক মারধর করে আসছিলেন।
গত ১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে লাঠি দিয়ে সুইটির হাত, পা, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে জখম করেন আসামিরা। ওই দিন রাত ১০টার দিকে সুইটির পরা কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে সুইটির পশ্চাৎদেশের দুই পাশে শক দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেন পাভেল-আঁখি দম্পতি।
এতে সুইটির পশ্চাৎদেশের মাংস ঝলছে বিকৃত হয়ে যায়। পাভেল ও আঁখি রুটি তৈরির কাঠের বেলুন দিয়ে সুইটির বাম হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে দেন। আঁখি সুইটির যৌনাঙ্গে বেলুন ঢুকিয়ে নির্যাতন করেন। যার ফলে সুইটির যৌনাঙ্গ বিকৃতসহ ক্ষত-বিক্ষত হয়। চোখে-মুখে ও যৌনাঙ্গে মরিচ লাগিয়ে দেয়া হয়।
সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য আসামিদের বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে খেতে না দিয়ে দুই দিন বাথরুমে আটকে রাখেন। গত ৩ জুলাই সুইটি বাথরুম থেকে বের হয়ে তাদের ঘরে থাকা বিস্কুট খেলে আসামিরা তার ওপর রাগান্বিত হয়ে রাত ১টার দিকে তাকে আবার মারধর করেন। সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য কৌশলে আসামিদের বাসা থেকে পালিয়ে একজনের বাসায় আশ্রয় নেয়।
এরপর আশ্রয়দাতারা পুলিশে খবর দেন। ৪ জুলাই পুলিশ এসে সুইটিকে উদ্ধার করে এবং ওই দম্পতিকে আটক করে। পরদিন তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তারা কারাগারেই আছেন।