দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছিল, ‘বিরাট গরু ছাগলের হাট’। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর গরুর হাট জমতে শুরু করেছে। তবে এ বছরের হাটগুলোতে বড় গরু ওভাবে চোখে পড়ছে না। সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৫ মণের গরু চোখে পড়েছে।
গত এক মাস ধরে গণমাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ মণের গরুর খবর এসেছে। তবে হাটে এত বড় গরুর দেখা মেলে না বললেই চলে।
বিক্রেতারা বললেন, এত বড় গরু সাধারণত খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। তাছাড়া এই গরু হাটে আনাতেও রয়েছে নানা ঝামেলা। যানবাহনে আনা-নেয়া, গরম সব মিলিয়ে ব্যাপারি ও খামারিরা এসব গরু হাটে আনতে চান না।
শুক্রবার বেলা ২টার দিকে ঢাকার সাভারে যানজটে আটকা পড়ে ও ‘প্রচণ্ড গরমে’ পাবনা থেকে আনা ২৭ মণের একটি অতিকায় গরু মারা গেছে। অসুস্থ আরও পাঁচটি গরু।
গরুটির মালিক মুকুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল ছয়টা গরু নিয়া পাবনার সাঁথিয়া থাইকা ঢাকায় আসতেছিলাম। পথে টাঙ্গাইল থেকে অনেক যানজট শুরু হয়। ৫-৭ ঘণ্টার পথ ১৫ ঘণ্টা লাগছে বাইপাইল আসতে। পরে এখানে আইসা ২৭ মণের একটা গরু গরমে অসুস্থ হইয়া ট্রাকের মধ্যেই মারা যায়। অসুস্থ হইছে আরও পাঁচটা গরু। এলাকায় গরুটার দাম উঠছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আমি ভালো দামে বেচব বইলা ঢাকায় আনছি।’
সারাদেশ থেকে খামারি ও ব্যাপারিরা ট্রাক ও ট্রলারে করে গরু নিয়ে এসেছে। কেউ কেউ এখনও আসছেন গরু নিয়ে।
সারাদেশ থেকে খামারি ও ব্যাপারিদের কেউ কেউ এখনও ট্রলার ও ট্রাকে করে গরু রাজধানীর হাটগুলোতে নিয়ে আসছেন ।ছবি: নিউজবাংলা/সাইফুল ইসলাম
ব্যাপারিরা বলছেন, সবে মাত্র গরু নিয়ে আসছে সবাই। হাট ভালোভাবে মিলতে রোব-সোমবার। এখনো অনেকে গরু নিয়ে পৌঁছায় নাই।
শুক্রবার রাজধানীর আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা যায়, খামারি ও ব্যাপারিরা পশু এনে নিজ নিজ যায়গায় রেখেছেন। তবে এখনও বিক্রি শুরু হয়নি।
৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৪ লাখ টাকা চাচ্ছেন ব্যাপারিরা। তবে ক্রেতারা দাম বলছেন কম। ছাগলের দাম চাইতে দেখা গেছে আট থেকে ১৫ হাজার টাকা।
মোহাম্মদপুর বসিলা গার্ডেন সিটিতে বসেছে হাট। সেখানে কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে এসেছেন ব্যাপারি আজিম মণ্ডল।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২৩ টা গরু আনছি আমরা। লাখের উপর থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার গরু আছে এখানে। বাড়ি বাড়ি মানুষ গরু পালে। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে আনি। আবার নিজেও পালি। বাড়ি থেইকাই গরু ২৫ হাজার টাকা মণ পড়ে।’
বেচাকেনা কেমন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও গরু বিক্রি হয় নাই। হাট তো মাত্র শুরু হইছে। যারা আসতেছে তারা এক লাখ টাকার গরুর দাম কয় ৫০ হাজার। আল্লা জানে কী হয়?’
এরশাদ আলি এসেছেন পাবনার সাঁথিয়া থেকে। গরু এনেছেন ২৪ টা। এর ১২টি নিজে পেলেছেন। বাকিগুলো কিনে এনেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুই ট্রাকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে গরু ঢাকায় আনছি। এখানে খাওয়া-দাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। যে খাবার পাওয়া যায় তা মানসম্মত না। এখনো কোনো বিক্রি হয় নাই। যারা আসতেছে তারা যে দাম বলে তা কেনা দামেরও কম।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানার চেষ্টা করতেছি। মাস্ক পরার অভ্যাস নাই। মাস্ক মুখে দিলেই গরম লাগে। পকেটে রাখছি।’
স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
বসিলা গার্ডেন সিটির হাট ঘুরে দেখা যায় ব্যাপারিরা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ভেতরে পানির চৌবাচ্চা করা হয়েছে। সেখানে ১৫-২০ জনকে একসঙ্গে গোসল করতে দেখা যায়। কাউকেই মাস্ক পরতে দেখা যায় না। অনেক স্বেচ্ছাসেবকেও দেখা যায় মুখে মাস্ক ছাড়া।
ব্যাপারি গোল হয়ে আড্ডা দিয়ে অলস সময় পার করছেন।
হাটের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে হাটের তত্ত্বাবধায়ক মো. রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৪ তারিখ থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ হাজার গরু এই হাটে রাখার যায়গা আছে। এখন পর্যন্ত গরু এসেছে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো। ব্যাপারিদের পানি, টয়লেট, সিসি ক্যামেরা, ডাক্তারসহ সকল ব্যবস্থা রয়েছে।’
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলে, ‘সরকারের সকল নিয়ম মেনে হাট বসেছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ব্যাপারিদেরও মাস্ক পরা লাগবে। সিটি করপোরেশন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটাই মেনে নেব।’
বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে জারা এসেছেন, তারা অনেক সময় সিগারেট খান। গরুকে খাওয়ানোর সময় তারা আসলে মাস্ক পরে করতে পারেন না। এ জন্য আমাদের একটা টিম করা আছে। ভলেন্টিয়ারদের মাস্ক অনেক সময় হারিয়ে যায়, অনেক সময় ছিড়ে যায়।
বসিলা গার্ডেন সিটির হাট ঘুরে দেখা যায় ব্যাপারিরা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ছবি: নিউজবাংলা
ইজারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ৫ শতাংশ ইজারা নেয়া হয়। যারা গরু নিয়ে এসেছেন তাদের কোনো খরচ নাই।
হাটের বাইরে রয়েছে র্যাব ও পুলিশের আলাদা দুটি বুথ। হাটের আইনশৃঙ্খলার জন্য তারা নিয়োজিত আছেন।
র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনও তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, স্বাস্থবিধির বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই। এটার দায়িত্ব হাট কর্তৃপক্ষের। এর দায়ভার তাদের।