নিজের বড় মেয়েকে নিঃসন্তান ননদকে দিয়ে দিতে পুত্রবধূ মাধবী আক্তার নিলাকে চাপ দিয়েছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ। রাজি না হওয়ায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় নিলাকে মারধর করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেয়া হয়।
ওই মামলায় এক মাস সাত দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে নিলাকে। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বারবার জামিন আবেদন করেও জামিন মেলেনি। অবশেষে দশমবারের আবেদনে জামিন পান তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই জন্ম দেন দ্বিতীয় সন্তানের।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রূপনগর আরামবাগে ভাড়া বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে হাসান আরিফ ও তার ছেলে মোয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেন নিলা।
তিনি বলেন, ‘২৮ এপ্রিল নিজের দুই বছর বয়সী বড় মেয়েকে সর্বশেষ দেখেছিলেন। এরপর আর তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। মারধর, মামলা, আদালত থেকে জামিন না পাওয়া সবই হয়েছে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের ইশারায়।’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ। ছবি: সংগৃহীত
নিলা বলেন, ‘আমার অবুঝ মেয়েটাকে ওরা ননদকে দিয়ে দিতে চায়। আমি রাজি না হওয়ায় নির্যাতন, মামলা, জেল খাটিয়েছেন আমার শ্বশুর। আমি আদালতের মাধ্যমে আমার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছি। এর আগে ব্লাস্টের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য আমাদের বসানো হয়। সেখানে সমঝোতা না করে হাসান আরিফ সাহেবের একজন জুনিয়র উল্টো হুমকি দিয়েছেন, এবার হাসান আরিফের খেলা দেখবা।’
সংবাদ সম্মেলনে মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা জানান নিলা।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মোয়াজ একজন অ্যাকোহলিক। নিজে কিছু করে না, বাবার টাকায় চলে। তার বাবা যা বলে তাই শুনে আমাকে মেরে একবার বাচ্চা নষ্ট করেছে। এখন আমার মেয়ে কেমন আছে জানি না। ওর নিরাপত্তা নিয়ে আমি চিন্তিত।’
২৮ এপ্রিল নিলার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন তার স্বামী মোয়াজ আরিফ। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নিলা এক মাস চার দিন জেল খাটেন। কারাগারেই নিলার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। গত ৭ জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মোয়াজ আরিফ মামলায় অভিযোগ করেন, নিলা ২৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে বাসার গৃহকর্মীদের নির্যাতন করতে থাকলে তিনি বাধা দেন। এতে নিলা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে একটি ছোরা নিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চোখে আঘাত করেন। পরে বাসায় থাকা গৃহকর্মীদের সহায়তায় উদ্ধার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
তবে মোয়াজের এ অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করেছেন নিলা।
তিনি বলেন, ‘ওদের মারধর আর সহ্য করতে না পেরে আমি চাকু নিয়েছিলাম, বলেছিলাম, নিজেকেই নিজে শেষ করে দিই। ওরা ক্ষমতার জোরে সব করছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।