ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফিরতে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের পর বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচল। সকালে বা দুপুরে তেমন যাত্রীর দেখা না পাওয়া গেলেও বিকেলের দিকে যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ছিল না যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
ঢাকার নদী বন্দর সদরঘাটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও সারাদিন অল্প সংখ্যক লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। তবে বিকেলের দিকে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় লঞ্চ চলাচল।
সকালে কিছু যাত্রীর দেখা মিললেও দুপুরের দিকে তেমন কোনো যাত্রীই ছিল না। টিকিট কাউন্টারগুলোও ছিল ফাঁকা। বিকেল ঘনিয়ে আসলে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীদের আসা শুরু হয়। মাস্ক পরে থাকার নিয়ম থাকলেও পরে যাত্রীদের অনিহা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে অসচেতনতার দেখা মেলে।
লঞ্চ ছাড়ার খবরে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা আসেন সদরঘাটে। সেসব লঞ্চ ও ছেড়েছে সময় মতোই। তবে লঞ্চের ডেকে দেখা মিলল অতিরিক্ত যাত্রীর। তবে ভাড়া বেশি নেয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
বরিশালগামী একজন যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন জন একসঙ্গে বাড়ি যাচ্ছি। বাড়িতে বাবা-মা আছে। তাদের সঙ্গে ঈদ করব। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাড়ি যাচ্ছি।’
টার্মিনালে লঞ্চ খুঁজতে থাকা রাজিন নামে এক যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে আগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঈদের আগে ভিড় হবে। মানুষ বেশি হবে। এতো মানুষের মাঝে গেলে করোনা হবার ভয় আছে।’
বউ বাচ্চার সঙ্গে ঈদ করতে পটুয়াখালীর বাড়িতে যাচ্ছেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মেহেদি।
তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম ভিড় হবে প্রচুর। কিন্তু এসে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। এবার ভালোয় ভালোয় বাড়ি গিয়ে ঈদটা করতে পারলেই হলো।’
সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার আগেই ডেকে বসে থাকা বেশিরভাগ যাত্রীকেই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তাদের কাছ থেকে শোনা যায় নানা অযুহাত। কেউ বলছেন গরম, আবার কেউ বলছেন ভালো লাগে না, অস্বস্তি লাগে।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে এমভি সুরভী-৭ এর স্টাফ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের বারবার বলছি মাস্ক পরে থাকুন। এর কিছুক্ষণ পরে রাখে তো, একটু পরে খুলে ফেলে। আমাদের কী করার আছে বলুন।’
এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া যা বলা হইছে তাই নেয়া হচ্ছে। বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। মালিক জানতে পারলে চাকরি চলে যাবে।’
এমভি মানামীর মাস্টার আজাদ বলেন, ‘আমরা যথাসময়েই লঞ্চ ছাড়ব। যাত্রীদের যেন যাত্রাপথে কোনো দুর্ভোগ না হয় সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’
লঞ্চ চলাচল ও সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই লঞ্চ চলতেছে, বিকেল থেকে তা পুরো দমে চলাচল শুরু করেছে।’
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে প্রতিটা গেইটে বলে দিচ্ছি এবং মাইকে বলছি মাস্ক পরিধানের করে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। যাত্রীরা যেন মাস্ক সবসময় পড়ে থাকে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে জানানো হয়েছে। আমরা প্রতিটা গেইটে অতিরিক্ত মাস্কও রেখেছি। যদি কারও মাস্ক না থাকে তাহলে যেন নিতে পারে এবং প্রয়োজন হলে আমরা নিজেরাও বলছি।’
মাস্ক না পড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ জনকে জরিমানা করেছে বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলাকে যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এ পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৪৩টি নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু করছে। ঢাকা-মুলারহাট, ভান্ডারিয়া, পটুয়াখালী। তারপর চাঁদপুর, সুরেশ্বর ওয়াপদা তো আছেই। ঝালকাঠি, হাতিয়া, ভাসানচর, কালাইয়্যা এসব নৌপথে লঞ্চ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে বারবার নিষেধ করা হচ্ছে। যদি অতিরিক্ত যাত্রীই হয় তাহলে আমরা তখন যাত্রী সংখ্যার ওপর নির্ভর করে লঞ্চ দিব।’