করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ অবস্থার মধ্যেও সাত দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার।
১৪ দিনের লকডাউনের পর বৃহস্পতিবার থেকেই খুলেছে দোকানপাট-শপিং মল। তবে অন্যবার লকডাউনের পর মানুষের যেমন ঢল থাকে মলগুলোতে, এবার তেমনটা নেই। ক্রেতা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মার্কেটগুলোর প্রবেশপথে সবাইকে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছিল। তবে মার্কেটের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ছিল ঢিলেভাব। প্রথম দিন হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বেশ দেরি করেই দোকান খুলেছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের পর অল্প কয়েক দিনের জন্য শপিং মল খোলায় তারা মনে করেছিলেন ক্রেতার প্রচুর চাপ থাকবে। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেলেও ক্রেতার উপস্থিতি বাড়েনি।
দুপরের পর রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজায় দেখা যায়, শপিং মলটিতে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম। পুরো নিচতলায় হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতার দেখা পাওয়া গেল। এ মার্কেটের বিশ্বরঙ-এর বিক্রয়কর্মী মামুন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ পর মার্কেট খুলেছে। রাতে ভাবছিলাম সকালে দোকানে জায়গা দেয়া যাবে না, মানুষের ভিড় থাকবে। কিন্তু তার কাছাকাছিও নাই। সকাল থেকে বেচাকেনার যে অবস্থা তাতে হতাশই হচ্ছি।’
এম টয়’স ওয়ার্ল্ডের আরেক বিক্রেতা পলক বলেন, ‘বেচাকেনা মোটামুটি চলছে, যেমন আশা করছিলাম তেমন নাই। তবে যা পাই তাতেই খুশি। একেবারে বন্ধ থাকার চাইতে কম বেচাকেনাও ভালো। বেচাকেনা বাড়লে আরও ভালো।’
ক্রেতা হোসেন বলেন, ‘মনে করছিলাম মানুষের ভিড়ে মার্কেটে ঢুকতেই পারমু না। কিন্তু এসে দেখি তেমন মানুষ নাই। তাতে অবশ্য ভালোই হইছে। ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করা যাবে। মেয়ের জন্য কয়েকট খেলনা ও জামা কিনমু।’
বসুন্ধরা সিটিতেও একই অবস্থা। সাধারণ দিনের তুলনায় ক্রেতা-দর্শনার্থী অনেক কম বলে জানান বিক্রেতারা।
বসুন্ধরা সিটির নিচতলার সারা লাইফস্টাইলের বিক্রয়কর্মী জিয়াদ হোসেন বলেন, ‘সকালে মার্কেট খোলার পর লোক একেবারে কম ছিল। দুপুরের আগে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা আসেন। অন্য সময় সাধারণ দিনে আরও বেশি বেচাকেনা হয়। অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি বিক্রি আশা করেছিলাম।’
অপর বিক্রেতা মার্বেল হাউজের আলোক চান মোল্লা বলেন, ‘বেচাবিক্রি তেমন ভালো না। বিক্রি করে যা টাকা নগদ করা যায় তাই কাজে আসবে। বিকেল থেকে কিছু ক্রেতার দেখা পাচ্ছি। এখন রাত পর্যন্ত কী অবস্থা হয় দেখি।’
বিক্রি কমার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই কোরবানির ঈদে কেনাকাটা কম হয়। তবে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য মার্কেট খুলছে। ঈদের পর আবারও লকডাউন। তাই অনেক মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন মানুষ ঘরে বসে থাকায় অনেকেরই হাতে টাকা নেই। তাই মধ্যবিত্ত ক্রেতাও তেমন নেই।’
তবে ভিন্ন কথা বলেন মোবাইল ফোন বিক্রেতারা। শাওমির বিক্রয়কর্মী মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালোই। সকাল থেকে অনেক ক্রেতা আসছিল, বিক্রির ফ্লোও ভালো ছিল। দুপুরে চাপ একটু কম থাকে। বিকেলে আবার বাড়ছে।’
ফুটপাতের বিক্রি মোটামুটি বলে জানান বিক্রেতারা। পান্থপথ মোড়ের বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট বিক্রেতা মোসতাক বলেন, ‘অনেক দিন পর দোকান খুলতে পারছি, এটাই বড় কথা। দুপুরের পর মাল নিয়া বসছি। এক ঘণ্টায় তিনটা প্যান্ট বেচচি। যা বেচচি আলহামদুলিল্লাহ। বন্ধ করার আগে ১০-১২টা বেচতে পারলেই চলব।’