গত বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে ব্যয় সংকোচনে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে পাইলটদেরও বেতন কাটছিলো রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বিমান সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগস্ট থেকে কর্মকর্তাদের বেতন আর কাটা হবে না। কিন্তু পাইলটদের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। আর এতেই খেপেছেন পাইলটরা।
তারা বলছেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে আগস্ট থেকে চুক্তির অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব তারা আর পালন করবেন না। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বিমান কর্তৃপক্ষকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।
বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে পাইলটদের চলমান সমস্যা নিরসন না হলে আগস্ট মাস থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী ও দুবাই, কাতারের দোহা এবং সৌদি আরবের দাম্মাম রুটে ফ্লাইট বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
বিমানের পাইলটরা জানান, গত বছরের মে মাস থেকে তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটা হচ্ছিলো।
বিমান নতুন যে আদেশ জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না। তবে যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন তাদের বেতন ২৫ শতাংশ কাটা হবে। এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পাইলটরা।
বর্তমানে বিমানে সব মিলিয়ে ১৫৭ জন পাইলট কর্মরত রয়েছেন।
বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগেও যখন আমাদের বেতন কাটা শুরু হয়েছে সেটি হয়েছিলো আলোচনা ছাড়াই। তবুও করোনা মহামারির কথা বিবেচনায় রেখে আমরা ফ্লাইট চালু রেখেছিলাম। কখনো কখনো আমাদের চুক্তির বাহিরে গিয়েও অতিরিক্ত সময় আমরা ফ্লাইট করেছি। এখন যখন সব আগের মতো সচল হচ্ছে তাহলে আমাদের সঙ্গে এ অন্যায় কেন?’
বাপার সঙ্গে বিমানের যে চুক্তি সে অনুযায়ী একজন পাইলটের দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘন্টা কাজ করার কথা। সপ্তাহে একজন পাইলট কাজ করবেন সর্বোচ্চ ৭৫ ঘন্টা। এর বাহিরেও তিনি সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাবেন।
বাপা সভাপতি মাহবুব বলছেন, ‘বিমানের বেতন কাটার প্রক্রিয়াটা শুরু থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আমাদের বেতনের অন্তর্ভুক্ত ওভারসিজ ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এই ভাতাটি ২০১০ সাল থেকে বিমানের পাইলটদের বেতনের অংশ হিসেবে দেয়া হচ্ছিল। বেতন থেকে ওভারসিজ ভাতা বাদ দিয়ে যে টাকা হচ্ছে সেটার ওপর আবারও কর্তন করা হচ্ছে।
‘যাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমান, ত্রুটির কারণে তাদের বেতন কাটা হয়েছে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত। যাদের ৫০ ভাগ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের বেতন কেটেছে ৭২ শতাংশ। বিমান আইন লঙ্ঘন করে এককভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিমানের সঙ্গে পাইলটদের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। তারা এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে আমরা চুক্তির বাহিরে কোনো ডিউটিই করবো না। নিয়ম অনুযায়ী আমার দৈনিক ১৩ ঘণ্টা ফ্লাইট করার কথা এটি ১৪ ঘন্টা হলে আমি যাবো না। জোর করে তো কাউকে দিয়ে ওভারটাইম করানো যাবে না।’
এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।