নির্জন সড়কে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) চেকপোস্ট বসিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি করত একটি চক্র। তাদের গায়ে থাকত ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফ। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছে এমন লোকজনকে টার্গেট করে ডাকাতি করত তারা। এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জাহিদ হাসান রেজাউল, মানিক ব্যাপারী ওরফে দারোগা মানিক, ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও রুবেল সিকদার রুস্তম।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার চারজন ডিবির ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে বেড়াত। ঈদকে টার্গেট করে বড় বড় গরুর পাইকারের পিছু নিত তারা। এরপর সুবিধাজনক নির্জন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে থাকা সব লুট করে নিত।
ডিবির জ্যাকেট ও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকলেই কাউকে সবকিছু না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার (ঢাকা উত্তর)।
তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ সব সময় বা সব জায়গায় টেকপোস্ট বসায় না। সুতরাং পুলিশ পরিচয়ে কেউ সবকিছু নিতে চাইলে ভেরিফাই করুন, আশপাশে পোশাকে অন ডিউটিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হোন।’
ভুয়া ডিবি পুলিশের অপতৎপরতা রোধে সবার সচেতনতা ও দায়িত্ব দরকার বলেও মনে করেন হারুন অর রশীদ।
গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। ডিবি পুলিশের বেশে রাতে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলার সড়কে স্বল্প সময়ের জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করছিল তারা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাটের পাইকার ও ক্রেতাদের নগদ টাকা ডাকাতি করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
তারা বিভিন্ন ব্যাংকের আশপাশে ওত পেতে থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন ও পরিবহনকারী ব্যক্তিকে অনুসরণ করত। পরবর্তী ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওই টাকা পরিবহনকারী ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ডাকাতি করে এবং ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে দূরবর্তী স্থানে ফেলে দিত।
গ্রেপ্তারকৃতদের নামে ডিএমপিসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস ও জেল খেটেছে বলেও পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে গরুর পাইকার, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কিংবা যে কেউ যদি মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন, তাহলে পুলিশকে জানান, পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মানিস্কট সেবা নিন। মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেনে অলিগলি পথ এড়িয়ে চলুন, যেখানে সিসি ক্যামেরা সেখানে বসে লেনদেন করুন।
গরু বহন করা গাড়ি, গরু কিংবা পশুর হাটে পাইকার ও ক্রেতার টাকা যেন কেউ ছিনতাই করতে না পারে, সে জন্য ডিবি পুলিশসহ ডিএমপির অন্যান্য ইউনিট সক্রিয় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কার কাছে টাকা আছে তা কী করে চক্রের সদস্যরা জানে? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ব্যাংকে বা ব্যাংকের সামনে, যেখানে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয় সেখানে তাদের সোর্স আছে। আবার গার্মেন্টসে বেতন দেয়ার সময় গাড়িতে করে টাকা আনা-নেয়া হয়। এটাই তারা সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি করে ডাকাতির চেষ্টা করে।