ডাকাতির পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন দুজন। কিন্তু বাড়ির কেয়ারটেকারকে খুন করে ফিরে যান সিরাজগঞ্জে। ঘটনার দুদিনের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। গ্রেপ্তারের পর দুই আসামি দিয়েছেন খুনের বিস্তারিত বিবরণ।
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে আসামি গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় রোববার সংঘটিত সুবল চন্দ্র পাল হত্যা ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। খুনের দুই দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই আসামিকে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, উত্তরার সুবল চন্দ্র পাল হত্যা ঘটনায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাসুদ রানা ও মিজানুর রহমান নামের দুই আসামিকে। প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি গ্রেপ্তারের সময় জব্দ করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহার করা কাঁচি, রক্তমাখা জামা ও ভিকটিমের জামার পোড়া অংশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, আসামি মাসুদ রানা একসময় উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে ব্যবসায়ী হাসান ইমামের গাড়ি চালাতেন। দেড় মাস আগে চাকরি ছেড়ে সিরাজগঞ্জে চলে যান। সেখানে একটি লুঙ্গি কারখানার মাইক্রোবাস চালানো শুরু করেন।
ঢাকা ছাড়ার পর মাসুদ রানা পরিকল্পনা করেন আগের মালিকের বাড়িতে ডাকাতির। বিষয়টি বন্ধু মিজানুর রহমানকে জানান। তারা দুজন ডাকাতির জন্য ১০ জুলাই ঢাকা আসেন। বাড়ির কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পালের ঘরে তারা অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে মাদক সেবনের পর গভীর রাতে সুবলের হাত-পা বাঁধতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তখন ঘরের ভেতরে থাকা একটি কাঁচি সুবলের গলায় চেপে ধরেন মাসুদ রানা।
সুবল প্রাণে বাঁচার জন্য মাসুদের হাতে কামড় দেন। তখন কাঁচির ফলা গলার ডান পাশে ঢুকিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সুবলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাসুদ ও মিজান পাশে থাকা পানির কলে রক্ত ধুয়ে বাড়িটি থেকে বেরিয়ে যান। সুবলকে হত্যার কারণে ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ডিসি সাইফুল ইসলাম জানান, বাড়ির মালিক যখন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবেন, ঠিক তখন ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল আসামিদের। কেয়ারটেকারের পাশাপাশি বাড়ির অন্য লোকজনকে জিম্মি করে মালামাল লুট করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ধস্তাধস্তির সময় সুবল খুন হয়ে গেলে পরিকল্পনা বদলাতে হয়।
গ্রেপ্তার করা আসামি মাসুদ রানা পেশায় গাড়িচালক হলেও তার যোগাযোগ ছিল ডাকাতদলের সঙ্গে। মিজানুর মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালান। কিন্তু তিনি পেশাদার ডাকাত বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা এলাকা থেকে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুলিশ দুই আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠিয়েছে।
গত ১১ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে একটি বাড়িতে খুনের শিকার হন কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পাল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন।