শাটডাউন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউনের ১৩তম দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চলাচল। কোথাও কোথাও যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
আগের দিন শাটডাউন শিথিলের খবরের পর মঙ্গলবার এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও কোরবানি ঈদ ও পশুর হাট বিবেচনায় নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ৮ দিনের জন্য শাটডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময়ে শর্তসাপেক্ষে চলবে গণপরিহন। তবে ঈদের পর ফের ১৪ দিনের জন্য শাটডাউন দেয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, কলেজ গেট, ফার্মগেট, মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, মতিঝিল ও বাড্ডা ঘুরে দেখা যায়, মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
কোনো কোনো চেকপোস্টে মঙ্গলবার সকালে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি চোখে পড়েছে। শাটডাউনের শুরুর দিনের মতো রিকশার চলাচল চোখে পড়ার মতো।
চেকপোস্টে নেই কড়াকড়ি
পয়লা জুলাই শাটডাউন শুরুর পর রাজধানীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টে প্রতিটি ধরে চেক করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। তবে মঙ্গলবার তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
রাজধানী বাড্ডা এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রবিউল্লাহ রবি।
তিনি বলেন, ‘আমার বাসা মেরাদিয়া। বাসা থেকে আসার সময় মালিবাগ-মৌচাক হয়ে আসতে প্রচণ্ড জ্যাম ছিল। মানুষ হুড়মুড় করে বের হচ্ছে বাসা থেকে।
‘জ্যামের কারণে অফিসে আসতে দেরি হয়েছে ৩০ মিনিট। এ ছাড়া রামপুরা এসেও গাড়ি খুব ধীরে ধীরে চলেছে।’
মালিবাগ, মৌচাক, ফার্মগেট, গাবতলী, কলেজগেট, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১০ ও বাড্ডা চেকপোস্টে গাড়ির জটলা দেখা যায়।
ব্যতিক্রম দেখছে না পুলিশ
গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা বাড়লেও পুলিশ বলছে রাজধানীর সড়কের পরিস্থিতি অন্য দিনের মতোই আছে।
বাড্ডা চেকপোস্টের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যান চলাচল অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা প্রতিদিনের মতোই আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। অপ্রয়োজনে কেউ বাসা থেকে বের হলে আমরা তার ও গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রাজধানীর বেশ কিছু সিগন্যালে গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও চার থেকে ছয় মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় সাধারণ মানুষের আড্ডাও চোখে পড়েছে। চায়ের দোকান খোলা দেখা গেছে।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চলমান শাটডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে সরকার। শিথিল করার দিন আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শর্ত সাপেক্ষে চালু করা হবে বাসসহ গণপরিবহন। খোলা হবে দোকানপাট।
এ বিষয়ে শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
সারা দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কঠোর লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত কেন নিল সরকার, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদিকে জনস্বাস্থ্য, আরেক দিকে ঈদ উৎসবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার তাগিদ–এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দোটানায় ভুগছিলেন নীতিনির্ধারকরা।
বিশেষ করে কোরবানির পশুর কেনাবেচা ঠিকমতো না হলে বিপুলসংখ্যক খামারির অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। এবার কোরবানির জন্য খামারগুলোতে ১ কোটি ২০ লাখ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
কোরবানিতে পশুর বাণিজ্য হয় প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার।