বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আরে ভাইয়া পুলিশ আগিয়ে তোম লোক মাস্ক লাগাইয়া’

  •    
  • ৪ জুলাই, ২০২১ ১৬:৪৮

কোনো পুলিশ আসছে কি না, এসব দেখতে লোকও রাখা হয়েছে। পুলিশ আসছে দেখেই তিনি হাঁক দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেন। বলেন, ‘আরে ভাইয়া পুলিশ আগিয়ে, তোম লোক মাস্ক লাগাইয়া না তো জরিমানা হো-গায়া।’

শাটডাউনের প্রথম দিন তিন পুরান ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক ও এলাকাগুলোতে মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। বেড়েছে যান চলাচল। এ ক্ষেত্রে কৌশলী উপায় অবলম্বন করছে সেখানকার মানুষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি আসতে দেখলেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে দোকানপাট। থুতনি থেকে মুখ ঢাকেন মাস্কে।

রোববার সকাল থেকে পুরান ঢাকার সড়ক ও অলিগলি ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতোই আড্ডা দিচ্ছেন। ভুলতে বসেছেন শাটডাউনের বিধিনিষেধ।

হাজারীবাগ থেকে শুরু করে নবাবগঞ্জ, সেকশন, কামরাঙ্গীরচর প্রবেশের ব্রিজ, নবাবগঞ্জ কাঁচাবাজার, সাতশহীদ ও গোরাশহীদ মাজার, আজিমপুর, ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজার, বকশীবাজার, হোসেনী দালান, নাজিমউদ্দীন রোড, পোস্তা, লালবাগ কেল্লার মোড়, ইসলামবাগ, শহীদনগর, লালবাগ থানার মোড়, চকবাজার মডেল থানা, সদরঘাটসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।

খাবার হোটেলগুলোতে ভিড়। হোটেলে বসে খাওয়াদাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। হোটেল মালিক-কর্মচারী ও ক্রেতাদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই।

কোনো পুলিশ আসছে কি না, এসব দেখতে লোকও রাখা হয়েছে। পুলিশ আসছে দেখেই তিনি হাঁক দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেন। বলেন, ‘আরে ভাইয়া পুলিশ আগিয়ে, তোম লোক মাস্ক লাগাইয়া না তো জরিমানা হো-গায়া।’

শহীদনগর এলাকার খাবার হোটেল মালিক সালাউদ্দিন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই, হঠাৎ করে এই শাটডাউন কেউ মানতে চায় না। আমাদের রুজি-রোজগারে হাত পড়েছে। আর এই করোনার বিষয় অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। অনেক পুলিশ সদস্যই তো মানে না। তারা অনেকে মাস্ক খুলে ডিউটি করছে, কিন্তু সমস্যা শুধু আমাদের।’

মাস্ক না পরেই ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে করে কাঁচামাল বিক্রি করছিলেন সোহেল ইমাম। মাস্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘ভাই সব সময় মাস্ক দিয়ে চলে না, মাস্ক পকেটে রাখি, প্রয়োজন হইলে মুখে লাগাইয়া নিই।’

ফলের দোকান, মাংসের দোকানগুলোতে দেখা যায় অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই।

লালবাগ রোডের ফুটপাতের ওপর ঝুড়িতে বা চট বিছিয়ে কয়েকজনকে শাকসবজি বিক্রি করতে দেখা যায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। এ ছাড়া ভ্যানের ওপর আম, কাঁঠাল বা শাকসবজির বিক্রেতাদের মুখেও খুব বেশি মাস্ক দেখা যায়নি।

বাহাদুর শাহ পার্কে মাস্কহীন দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বুঝিয়ে ছেড়ে দেয় তারা। এত বেশি মানুষ বাইরে হাঁটাচলা করছে তেমন কিছু করার নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও।

লালবাগ থানার সামনে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। কারো মুখে মাস্ক না থাকলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। তবে কাউকে জরিমানা করতে দেখা যায়নি।

পুলিশের টহল দেখা যায় সোয়ারীঘাট পুলিশ চেকপোস্ট, বাবুবাজার ব্রিজের নিচে, ইসলামপুর কাপড়ের মার্কেট, বাংলাবাজারের মোড়, বাহদুর শাহ পার্ক, রায়সাহেব বাজার মোড়সহ আশপাশের এলাকায়ও।

পুলিশের কারণে প্রধান মার্কেট ও সড়কগুলোর অবস্থা জনশূন্য থাকলেও অলিগলি ঘিরে বেচাকেনার কমতি নেই পুরান ঢাকায়।

অকারণে বের হওয়া, মাস্ক না পরার অভিযোগে শাটডাউনের চতুর্থ দিন দুপুর পর্যন্ত রাজধানীতে ৪২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

অন্যান্য দিন থেকে রাজধানীতে রোববার সকাল থেকে মানুষের চলাফেরা ছিল বেশি। কড়া অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। সরকারি আদেশ অমান্য করায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০৯টি গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এসব মামলায় জরিমানা করা হয় ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা।

নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, সবচেয়ে বেশি মামলায় জরিমানা হয়েছে মিরপুর বিভাগে। ৯১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে জরিমানা করা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া রমনায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০, লালবাগে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০, মতিঝিলে ৫৩ হাজার, ওয়ারীতে ৪৪ হাজার, তেজগাঁওয়ে ৭৪ হাজার ৫০০, গুলশানে ৬৫ হাজার ৫০০ ও উত্তরায় ৯৭ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর