এমনিতেই শাটডাউন, তার ওপর ঝুম বৃষ্টি। এতে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে পড়েছে ক্রেতার টান। শাকসবজি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দোকানিরা।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের সবজিবিক্রেতা ষাটোর্ধ্ব আমির হোসেন রোববার দুপুরে নিউজবাংলাকে জানালেন, গত চার দিন ধরে পাইকারি বাজার থেকে যে পরিমাণ সবজি কিনছেন তা শেষ করতে প্রতিদিনই বেগ পেতে হচ্ছে। কোনো দিন সব বিক্রিও করতে পারছেন না। লাভ তো দূরের কথা, কেনা দামও উঠছে না।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই মাল কিছু না কিছু থেকে যাচ্ছে। পচনশীল হওয়ায় হয় নিজের পরিবারের জন্য নিয়ে যেতে হয়, না হয় কম দামে বিক্রি করে দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন চলতে পারব জানি না।’
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে সাত দিনের কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে সরকার, যা পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শাটডাউনের সময়টায় কেউ অকারণে ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এমন কাউকে পাওয়া গেলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
রাজধানীতে তাই দেখা যাচ্ছে। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার দায়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান অনেকে। অনেককে করা হয় জরিমানা। শুক্রবার জরিমানা করা হয় ২০৮ জনকে। তৃতীয় দিন শনিবার ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬২১ জনকে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
খুব একটা ক্রেতা নেই মাছের বাজারেও। ছবি: নিউজবাংলা
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শাটডাউনে জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো জাহাজ এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে বলা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিবাগ বাজারে দেখা গেছে, মাছ ও সবজির বাজার বসেছে পাশের রাস্তার পাশে। মাংস ও মুরগির বাজার বসেছে আগের মতোই বাজারের ভেতরে। কিছুক্ষণ পরপর চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল।
শাটডাউনে অপ্রয়োজনে কাউকে ঘরের বাইরে দেখলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার ওপর বৃষ্টি। এসবে প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে। বেশির ভাগ মানুষ বাজারে না গিয়ে মহল্লার গলিতেই সারছেন বাজার-সদাই।
খিলগাঁওয়ের মোজাম্মেল হক চাকরি করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। কারওয়ান বাজারে অফিস করে বাসায় ফেরার পথে সেখান থেকেই বাজার করে নিয়ে আসেন। শাটডাউনের এই সময়ে অফিসের গাড়িতে আসা-যাওয়া করায় তার আর সে সুযোগ হচ্ছে না। যা কিনছেন মহল্লার বাজার থেকেই।
মোজাম্মেল বলেন, ‘ভালো ও একটু কম দামে বাজার করার জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে কারওয়ান বাজার। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেখানে যেতে পারছি না। এখন যে অবস্থা তাতে কারওয়ান বাজার বা মালিবাগ যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিছু দরকার হলে খিলগাঁও কাঁচাবাজার বা পাশে মহল্লার বাজার থেকেই কিনছি।’
মালিবাগ বাজারের সবজিবিক্রেতা আমির হোসেনও জানালেন, বাজারে ক্রেতা কম আসছে। নিউজবাংলাকে বললেন, ‘আগে মালিবাগ বাজারে খিলগাঁও, বাসাবো, তালতলা, মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসতেন। আমাদের পরিচিতও অনেক কাস্টমার ছিল, যারা নিয়মিত আমার কাছ থেকে বাজার করত। এখন তারা আসছে না।
‘সবকিছুতে কড়াকাড়ি থাকায় অনেক কাস্টমার পাড়া-মহল্লা থেকে ভ্যানের সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনছেন। ফলে শাটডাউনের এই সময়ে বিক্রি কমে গেছে।’
আশানুরূপ ক্রেতা না পাওয়ার কথা জানালেন কারওয়ান বাজারের সবজিবিক্রেতা সিদ্দিক মিয়া ও মুরগিবিক্রেতা আফজাল হোসেন।
সিদ্দিক বললেন, ‘সকালে ৫ হাজার টাকার মাল কিনেছি। এখনও ১ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারি নাই।’
হতাশার কথা জানালেন আফজালও। বললেন, ‘এমনিতেই লকডাউন। এর মধ্যে বৃষ্টি। মানুষ আইবো কেমনে। বইসা আছি। বিকিকিনি নাই।’
একই চিত্র দেখা গেছে বিজয় সরণির চারুলতা মার্কেটেও। শাকসবজি, মাছ-মাংসবিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এই বাজারের মাছবিক্রেতা ইমাম হোসেন বললেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ ক্রেতা অনেক কম। দেখেন না বইসা আছি।’
তবে সব কাঁচাবাজারেই শাকসবজি, মাছ, মুরগির দাম প্রায় একই পাওয়া গেছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা কেজিতে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি।
মাছের মধ্যে রুই ৩০০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৪০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫৫ টাকা, শিং ৫০০ টাকা, কাতলা মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কই ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির মধ্যে কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা পিস, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি, চালকুমড়া ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, কাঁকরল ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।