শাটডাউনে রাজধানীর সড়কগুলোতে মানুষের তেমন আনাগোনা না থাকলেও ভিন্ন চিত্র কাঁচাবাজারগুলোতে। রীতিমতো ভিড় জমিয়ে চলছে কেনাবেচা।
ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে কাওরান বাজার, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুরের কাঁচাবাজারে। মাছ, শাকসবজির দামও সহনীয়।
প্রতিটি কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও দোকানিদের মন ভরছে না। আরও ক্রেতা চান তারা।
মাছ বিক্রেতা মো. মহসিন বললেন, ‘আজকে কাস্টমার আছে। বৃষ্টি না হলে আরও কাস্টমার আইত।’
মাংস বিক্রেতা মো. পারভেজ বলেন, ‘শুক্রবার আরও বেশি বেশি কাস্টমার হয়। সে তুলনায় আরও কম হলেও কাস্টমার আছে।’
শাটডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয়ই আছে। গরুর মাংস প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
চাঁদ মিয়া দাবি করলেন, ‘কাস্টমার কিছুটা কম। এ জন্য আমি এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারছি। না হলে কথাই তো বলতে পারতাম না।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার হওয়ায় মাছের বাজারে কাস্টমার বেশি। অন্য শুক্রবারে এর চেয়েও বেশি ভিড় থাকে। আর আজকে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই সেই তুলনায় কাস্টমার কম।’
তিনি জানালেন, প্রতি কেজি রুই ২৮০ টাকায় ও কাতলা ৩৫০ টাকায় আর প্রতি কেজি মাগুর মাছ বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায়। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। প্রতিটি ইলিশ ১ হাজার টাকায় ও জোড়া ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাস্টমার থাকলেও বিক্রিতে মন্দা বলে জানালেন ওই বাজারের মাছ বিক্রেতা সুজন মিয়া। তিনি বলেন, ‘কাস্টমার যেডি দেখতেছেন এইডি ঘুরতে আইছে। আসলে কিন্তু কিননের কাস্টমার কম।’
মাছের দাম কিছুটা বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা। জাপান গার্ডেন সিটি থেকে মোহাম্মদপুর বাজারে আসা দিপু খান বললেন, ‘মাছের দাম বেশি।’
হিমেল হোসেন বলেন, ‘মাছের বাজারে তো বেশ ভিড় মনে হচ্ছে। এ জন্য মাছের দামও একটু বেশি কবলেই মনে হলো।’
বাজারের ইমন মাংস বিতানের কর্মচারী পাপ্পু মিয়া জানালেন, প্রতি কেজি খাসির মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। আগে একই মাংস ৮৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
দামে খুব একটা হেরফের নেই কাওরান বাজার ও বিজয় সরণি মোড়ের কলমিলতা মার্কেটে। প্রতিটি মার্কেটেই কমেছে মুরগির দাম।
সোনালি জাতের মুরগির সরকারি রেট প্রতি কেজি ২১৩ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে এর চেয়েও কম দামে, ২১০ টাকায়। কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, লকডাউনের পর থেকেই বাজার পড়তি। এখন আর আগের মতো কাস্টমার আসে না।
কাওরান বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও ডিম ব্যবসায়ী হিমেল মিয়া বলেন, ‘ডিমের দাম তিন দিন আগে যা ছিল তাই আছে। প্রতি ডজন ১০০ টাকা। তবে ব্রয়লারের দাম কমেছে। তিন দিন আগে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে ১৫০ টাকা বিক্রি করছি, এখন তা ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।’
সবজি বিক্রেতা সজল মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার দেইখ্যাই ভিড় বেশি। তয় এর মধ্যে অনেকে দর্শকও আছে।’
সবজির মধ্যে লাউ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, ঢেঁড়স ৫০ টাকায়, বেগুন প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়, আলু ২৫ টাকায় ও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পুইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা প্রতি আঁটি।
কাঁচাবাজারে মোটামুটি ভিড় থাকলেও তেমন কোনো ক্রেতা দেখা যায়নি সুপারশপগুলোতে। স্বপ্ন, আগোরা, মিনা বাজার, প্রিন্সের সুপারশপের আউটলেটগুলোতে কর্মীদের আলস্যে সময় কাটাতে দেখা গেছে।
কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে অনেক বেলা পর্যন্ত উত্তরা, মৌচাক, ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, আজিমপুর, বিজয় সরণি, হাতিরঝিল, বাড্ডা, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কেমন যেন ঘুমাচ্ছে রাজধানী।
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী রুখতে বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন, যা সব মহলে পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
শাটডাউনের প্রথম দিন রাজধানীসহ বেশ কিছু এলাকায় মানুষের চলাফেরায় দেখা গেছে কড়াকড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ছিল কঠোর অবস্থানে।
তবে শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে একেবারে অচেনা এক পরিবেশ দেখা যায়। মানুষের চলফেরা নেই বললেই চলে। অলস সময় কাটাতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। আর রাস্তায় যেসব গাড়ি দেখা গেছে, এর বেশির ভাগই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম ও অন্যান্য জরুরি সেক্টরের আওতাধীন।
তারা বলছেন, মানুষের অহেতুক কোনো চলাফেরা নেই, তাই খুব বেশি টহলেরও দরকার পড়ছে না।