মেরুল বাড্ডার কাঁচাবাজার। সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। প্রধান সড়ক থেকে এক যুবক দৌড়ে এসে চিৎকার করে জানাল ‘রাস্তার ওপারে গাড়ি থামতাছে। সবাই সাবধান!’
এক দোকানি কী গাড়ি, জিজ্ঞেস করতেই যুবক বলল, ‘আর্মির গাড়ি। সাবধান থাকেন’ বলেই আবারও দৌড়ে রাস্তায় চলে যায় যুবক।
নাম প্রকাশ না করা দোকানি বলেন, ‘পুলিশ হইলে সামলানো যায়, কিন্তু আর্মি হইলে খবর আছে। তাই ও রাস্তায় দাঁড়ায় আছে, কিছু হইলে আমগো খবর দেয়।’
একটু পরে আগের যুবক আবার এসে বলে, ‘আর্মির গাড়ি চইলা গেছে, একটু স্লো হইছিল, কিন্তু থামে নাই।’
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ, যা পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ নামে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হবে না। যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন চলবে না, চলতে পারবে না প্রাইভেট কার। তবে রিকশা চালু থাকবে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে খোলা থাকবে কাঁচাবাজার।
সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় যেসব কাঁচাবাজার আছে, সেগুলোকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসা হবে; যাতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে পারেন। তবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখা যাবে।
কড়া বিধিনিষেধের প্রথম দিন রাজধানীর অনেক বাজারেই এসব নির্দেশনা উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। এমনকি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পরও খোলা ছিল কাঁচাবাজার।
সন্ধ্যার আগে মেরুল বাড্ডা এলাকার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানই খোলা। মুরগির দোকান, সবজির দোকান, এমনকি মুদি দোকানও খোলা ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এখনো দোকান খোলা কেন এমন জিজ্ঞাসায় মুরগি বিক্রেতা আনোয়ার কোনো উত্তর দেননি। তবে ক্রেতা আশরাফ জানান, ‘জরুরি প্রয়োজনে মুরগি কিনতে হয়েছে। ভাইকে অনুরোধ করে খোলা রেখেছি।’
বাজারে চারটি মুরগির দোকানের সবই তখন খোলা ছিল।
মুদি দোকানগুলো কোনোটা দুই শাটার খোলা, কোনোটা এক শাটার খোলা, আবার কোনোটা এক শাটার বন্ধ রেখে অন্যটির অর্ধেক নামিয়ে রাখা।
জানতে চাইলে মুদি দোকানি নাসির উদ্দিন জানান, ‘লকডাউনের কারণে বেচাকেনা কম, বিকেলের পর কিছু কাস্টমার আসায় বন্ধ করতে দেরি হচ্ছে। তবে এক শাটার বন্ধ রাখছি, এখনই দোকান বন্ধ করে দেব।’
নাম বলতে অনিচ্ছুক অপর মুদি দোকানি বলেন, ‘বিকেলের পর লকডাউনের কড়াকড়ি কমে। আমি দোকান না খুললে অন্যরা খুলবে। তাই এখনও খোলা রাখছি। তবে পুলিশ বা কেউ আসলেই যেন খোলা না দেখে তাই শাটার কিছুটা নামায় রাখছি।’
এক সবজিবিক্রেতা বলেন, ‘সবজির দোকান খোলা আর বন্ধ কী? দোকানে না থাকলে বন্ধ, থাকলে খোলা।’
একই অবস্থা মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট জামে মসজিদের সামনের মাঠের অস্থায়ী বাজারে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টাতেও বেচাকেনা চলে সেখানে। সবজিবিক্রেতা হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে দিনে বেচাকেনা কম ছিল। মাল রয়ে গেছে, তাই একটু দেরি হইছে। তবে এখনই বন্ধ করছি। দারোয়ান কয়েকবার বলে গেছে।’
মধ্য বাড্ডা বাজারেও সন্ধ্যার পর বেচাকেনা চলতে দেখা গেছে। সড়ক থেকে গলিতে প্রবেশ করলেই দেখা গেছে সবজি ও ফলের দোকানসহ প্রায় সব দোকান খোলা। তবে বাজারের ভেতরের দোকান খোলা ছিল কম।
সবজিবিক্রেতার কাছে কয়েকটি সবজির দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনটা নিবেন নেন, দামাদামি কইরেন না। ঝামেলার মধ্যে আছি। দেখেন না দোকানের সামনে দাঁড়ায়া আছি। পুলিশ আইলে দৌড় দিতে হয়।’