রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার রাস্তায় পড়ে থাকা টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজ প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিউজবাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বনি আমিন।
বাসায় ফেরার পথে বুধবার রাতে বনি আমিন রাস্তায় একটি মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন।
এর ভেতরে ছিল ৮ হাজার ৭৫৬ টাকা, বেসরকারি একটি ব্যাংকে জমা দেয়া চার লাখ টাকার স্লিপ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র। আইডি কার্ডে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এতে প্রকৃত মালিকের কোনো ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার শঙ্কা করেন বনি।
এরপর বনি ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে টাকা ও কাগজপত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য থানায় যান। সেখানে গিয়ে আবারও ওই নম্বরে পুলিশকে দিয়ে ফোন করালে অপর প্রান্ত থেকে কল রিসিভ করা হয়।
টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধারের খবরে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন এগুলোর মালিক ফাহাদ হাসান। পরে তিনি থানায় হাজির হয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে সেগুলো বুঝে নেন।
ওই সময় বনি আমিনের উদ্দেশে ধানমন্ডি থানার ডিউটি অফিসার রাজিব বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে হারানো জিনিস পেতে অনেকে থানায় আসেন। খুব কম মানুষ টাকা ফেরত দেন। আপনি ওয়ালেটটা পাওয়ার পর বৃষ্টিতে ভিজে মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
হারানো টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফিরে পেয়ে নিউজবাংলার সাংবাদিকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান ফাহাদ।
তিনি জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি টাকাগুলো হারান। এরপর যে পথে তিনি মানিব্যাগটি হারান সেই পথে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। এ সময় চার্জ না থাকায় তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ হয়ে যায়।
ফাহাদ আরও বলেন, ‘ওষুধ কিনতে গিয়ে মানিব্যাগ হারিয়েছিলাম। বাসায় গিয়ে বিষয়টি টের পেয়ে মন খারাপ হয়। তবে টাকা পাওয়ার খবরে মন ভালো হয়ে গেছে। আমি নিউমার্কেট এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানের কর্মী। মানিব্যাগে দোকানের চার লাখ টাকা বেসরকারি একটি ব্যাংকে জমা দেয়ার স্লিপ ছিল।’
বনি আমিন বলেন, ‘আমি রাত সাড়ে ৯টার দিকে অফিস শেষে ধানমন্ডির শঙ্করে ফিরি। সেখানে হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে ফুটপাত ধরে বাসায় যাচ্ছিলাম। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। হাঁটার সময় দেখি ওয়ালেটটি রাস্তার পাশে পড়ে আছে। নতুন মানিব্যাগ দেখে বুঝলাম, কারও পকেট থেকে পড়ে গেছে।
‘বৃষ্টি হচ্ছিল বলে রাস্তায় তেমন লোক ছিল না। কেউ যদি এটা পেয়ে প্রকৃত মালিককে ফেরত না দেয়, সেটা ভেবে ওয়ালেটটির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করার চেষ্টা করি। এ সময় ওয়ালেটের ভেতরে আইডি কার্ডে মোবাইল নম্বর পাই। সেটাতে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্যাংকে টাকা জমার একটা স্লিপে আরও মোবাইল নম্বর পাই। সেটাও বন্ধ ছিল।’
বনি বলেন, ‘একপর্যায়ে অফিসের সহকর্মীদের জানালে তারা থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন। এরপর পুলিশের কাছে জমা দেয়ার পর আবার সেই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মালিককে পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফাহাদ হোসেন তার জিনিস পুলিশের কাছ থেকে বুঝে নেন।
‘হারানো জিনিস তার মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে আমিও খুশি। কারণ আমি কাছ থেকে দেখলাম টাকাটা হাতে পাওয়ার পর ছেলেটার চোখ আনন্দ-অশ্রুতে ছলছল করছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনলাম সে (টাকা হারানো ব্যক্তি) ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে। আজ বেতন পেয়ে তার মাকে ৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছে সে। হারানো বাকি টাকাটা ছিল তার সারা মাসের চলার পুঁজি।’