করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন তথা শাটডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। তাদের চেকপোস্ট পেরিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।
শাটডাউন নিয়ে আগে থেকেই গণমাধ্যমে খবর প্রচার ও ব্যাপক আলোচনার কারণে সকাল থেকে রাজধানীতে অনুমোদনহীন গাড়ি চোখে পড়েনি। মানুষের চলাচলও ছিল কম।
জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে চড়তে দেখা গেছে রিকশায়। পাশাপাশি প্রাইভেটকারেও গন্তব্যে গেছেন জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা।
সড়কে অনেক মোটরসাইকেল আরোহীকে দেখা গেছে। তবে একের অধিক যাত্রী বহন করলে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে চালককে।
শাটডাউনে বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। এ কারণে সড়কে অন্য দিনের মতো অফিসগামী মানুষের ভিড় ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই যানজটও ছিল না আগের মতো।
তবে গাবতলী ব্রিজ হয়ে ঢাকায় প্রবেশের পথে চেকপোস্ট পার হতে গাড়িগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। গাবতলী থেকে সাভারের দিকে যেতে আমিনবাজারেও জটে পড়তে হয়েছে গাড়িগুলোকে।
নগরজুড়ে চেকপোস্ট
সাত দিনের শাটডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যথাযথ কারণ ছাড়া যারা রাস্তায় বের হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রামপুরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। ছবি: নিউজবাংলা
বিজয় সরণি সিগন্যালে আলাদা চেকপোস্ট বসিয়েছে তেজগাঁও থানা পুলিশ ও শেরে বাংলা নগর ট্রাফিক বিভাগ।
শেরে বাংলা নগর ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শামীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে আছি। অফিস ও জরুরি কাজ ছাড়া তেমন কেউ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলতে দেখা যায়নি।’
গণভবন সিগন্যালে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। এই চেকপোস্টে কয়েকটি গাড়ির চালককে জরিমানা করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহিন ফরায়েজি বলেন, ‘আমাদেরকে কঠোর থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা গাড়িগুলো তল্লাশি করছি। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, জানতে চাচ্ছি।
‘সকাল থেকে অধিকাংশ গাড়ি ছিল অফিসগামী। কয়েকটি গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কেউ আইন অমান্য করলে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে।’
বেলা বাড়লে মানুষের চলাচল বাড়ার আশঙ্কা করছেন এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজ ছাড়া সকাল বেলা কে বের হয়! প্রজ্ঞাপনে প্রচুর ফাঁকফোকর রয়েছে। নানা অজুহাতে দুপুরের দিকে অনেকে বের হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।’
বাটা সিগন্যালে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট অপু বলেন, ‘আমরা ব্যতিক্রম যাদের পাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনের ৯২ ধারায় মামলা হচ্ছে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এক হাজার, প্রাইভেটকারের জন্য তিন হাজার টাকার মামলা দিচ্ছি। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করলে জরিমানার অঙ্ক দ্বিগুণ হচ্ছে।’
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা
এর আগে বুধবার শাটডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছিলেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘কেউ অকারণে বের হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ব্যবস্থা নেব। অকারণে বের হলেই বেশ আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে। যানবাহন ব্যবহার করলে মোটরযান আইনে ব্যবস্থা নিব।’
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী কেউ বাইরে বের হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে, যেটি আমরা এর আগে কখনো করিনি।
‘এবারে আমরা এই অবস্থান পর্যন্ত যাব। আপনারা এমনও শুনতে পারেন ডিএমপি প্রথম দিন ৫ হাজার লোক গ্রেপ্তার করেছে। এবার আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থায় থাকব।’
সড়কে রিকশার প্রাধান্য
গণপরিবহন না থাকায় শাটডাউনে রাজধানীতে চলাচলের বড় ভরসা রিকশা। বেশি ভাড়া দিয়েই যানবাহনটিতে চড়তে হয়েছে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় রিকশার এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। ভাড়া নিয়ে আলাপ তুললে তিনি বলেন, ‘যাইতে পারতেছি, এটাই বেশি। আমাদের কিছুই করার নাই। বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও যেতে হবে।’
রাজধানীর রামপুরায় সড়কে অনেক রিকশা দেখা গেছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কাজ নেই দিনমজুরদের
শাটডাউনে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। সড়কের পাশে সরঞ্জাম নিয়ে তাদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সড়কে কোদাল, ঝুড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় দিনমজুরদের। অন্য কিছু সড়কেও এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে অলস বসে থাকতে দেখা যায় দিনমজুরদের। ছবি: সাইফুল ইসলাম
পোশাকশ্রমিকদের ভোগান্তি
শাটডাউনে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা আছে পোশাক কারখানা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এসব কারখানার শ্রমিকদের নিজস্ব গাড়িতে করে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সে দায়িত্ব পালন করেননি। এ কারণে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে পোশাকশ্রমিকদের।
পরিবহন সুবিধা না পাওয়ায় হেঁটেই কর্মস্থলে ছুটতে হয়েছে পোশাকশ্রমিকদের। ছবি: সাইফুল ইসলাম
রাজধানীর জোয়ার সাহারা এলাকায় হেঁটে কারখানায় যেতে দেখা গেছে অনেক শ্রমিককে।
সড়কে সেনাবাহিনী
শাটডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সড়কে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় বন্দুক হাতে সড়কে টহল দিতে দেখা যায় কয়েকজন সেনা সদস্যকে।