করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে রিকশা ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের পরিবহন। সীমিত পরিসরের এ লকডাউনেও বন্ধ নেই সরকারি-বেসরকারি অফিস। কিন্তু কর্মীদের অফিসে আনতে পরিবহনের ব্যবস্থা করেনি অনেক অফিস কর্তৃপক্ষ। এ কারণে কর্মস্থলে যেতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মীদের।
রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অফিসগামী মানুষের জটলা দেখা গেছে। কেউ আছেন রিকশার অপেক্ষায়, কেউ বা অফিসের গাড়ির অপেক্ষায়।
অনেকে কোনো উপায় না পেয়ে দুই পায়ের ওপরই ভরসা রেখেছেন। অনেকেই আবার বেশি সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন। কারণ রাস্তায় কী হবে, সেটা জানেন না।
তাদের একজন মো. রায়হান। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে; থাকেন মেরুল বাড্ডায়। অফিস কুড়িল এলাকায়।
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও বাসা থেকে বের হয়েছেন অফিসের উদ্দেশে। লকডাউন পরিস্থিতি মাথায় রেখে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়েই বের হয়েছেন। কারণ এই দীর্ঘ পথটা তাকে হেঁটে অথবা রিকশায় যাওয়া লাগবে। অফিস থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা করেনি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় হেঁটে রিকশা খুঁজছিলেন তিনি।
নিউজবাংলাকে রায়হান বলেন, ‘খুব ঝামেলায় পড়েছি ভাই। বাসা থেকে অফিস বেশ খানিকটা দূর। অফিস থেকে গাড়ি দেয়ার কথা থাকলেও তারা সেটার ব্যবস্থা করেন নাই।
‘এদিকে অফিসে যাওয়া লাগবেই। অফিস তো আর বুঝবে না আমার সমস্যা।’
লকডাউনে যান ও জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা। ছবি: নিউজবাংলাকরোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সীমিত লকডাউন বলে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তাতে অফিসগামীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে বলেছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চলেছে কেবল রিকশা ও প্রাইভেটকার। এ কারণে রিকশাচালকরা এর সুযোগ নিচ্ছেন বলে জানান অনেকেই।
রায়হান বলেন, ‘কী আর করা। হাঁটছি আর রিকশা খুঁজছি। তবে রিকশা পাচ্ছি না। কখন অফিসে পৌঁছাব, কে জানে। আর রিকশাওয়ালা এর সুযোগ নিচ্ছেন। ডাকলে সাড়া দেন না। আর সাড়া দিলেও ভাড়া চান বেশি। হাঁটছি দেখি কতদূর যাওয়া যায়।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া অন্য আরোহী বহন না করতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ কারনে রাস্তায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং দেখা যায় না।
বাইকে আরোহী বহনে এ নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েন অফিসগামী তৌসিফ গালিব। তার বাসা মোহাম্মদপুর; কাজ করেন মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কোনো যানবাহন না পেয়ে হাঁটা শুরু করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রিকশা চলে। বাইক চললে সমস্যা কী? পরিবহনের ব্যবস্থা না করে অফিস খোলা রাখার মানে কী?
‘অফিস তো করা না, মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা। কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নাই। দেখেন রাস্তায় কত মানুষ হেঁটে অফিসে যাচ্ছেন।’
এই ভোগান্তির জন্য সরকারের ‘অপরিকল্পিত নির্দেশনা’কে দায়ী করেছেন তিনি।
তৌসিফ গালিব বলেন, ‘অফিস বন্ধ করে নাই। করছে বাস, মোটরসাইকেল বন্ধ। একেক সময় একেক নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার। ‘তাদের কোন পরিকল্পনা নাই। যখন যেটা মনে চাচ্ছে, হুট করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর যার ফল ভোগ করছি আমরা।’
মোটরসাইকেল যাত্রী না নেয়ার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, ‘লক্ষ করা যাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে মোটরসাইকেলে চালকের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তি রাইড শেয়ার করছেন অথবা কেউ কেউ পেশাগত কারণেও রাইড শেয়ার করছেন, যার ফলে একই হেলমেট বারবার বিভিন্ন মানুষ ব্যবহার করছেন। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।’