বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মায়ের সঙ্গে শেষ কথা ‘যাচ্ছি’

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২১ ২২:১২

মগবাজার প্লাজায় রোববার বিস্ফোরণের পর থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল না রেডিও ধ্বনির উপস্থাপক মোস্তাফিজুরকে। বন্ধু-স্বজনরা এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরে তার মরদেহ খুঁজে পান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।

কানের ডাক্তার দেখাতে মগবাজারে গিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ডাক্তার দেখানো শেষে ময়মনসিংহে মা মাহমুদা আক্তারকে ফোনে বলেন, ‘বাসায় চলে যাচ্ছি।’ মোস্তাফিজুরের আর বাসায় ফেরা হলো না। তাকে নিয়ে গেল মগবাজারের বিস্ফোরণ।

মগবাজার প্লাজায় রোববার বিস্ফোরণের পর থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল না রেডিও ধ্বনির উপস্থাপক মোস্তাফিজুরকে। বন্ধু-স্বজনরা এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরে তার মরদেহ খুঁজে পান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।

বার্ন ইউনিট থেকে মোস্তাফিজুরের মরদেহ রাখা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। সেখানেই দুপুরের দিকে নির্বাক দাঁড়িয়েছিলেন তার স্বজনরা।

মোস্তাফিজুর রহমান রেডিও ধ্বনিতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। তার বাবা আব্দুর রাজ্জাক ইতালিপ্রবাসী। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় মোস্তাফিজ। ঢাকায় থাকতেন শনির আখড়ায়।

মগবাজার প্লাজায় বিস্ফোরণে মোস্তাফিজসহ এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এক শিশুসহ দুজন মারা যান মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তারা হলেন ১১ মাস বয়সী তাইয়েবা এবং রুহুল আমিন নোমান।

তিনজন মারা গেছেন বার্ন ইউনিটে। তারা হলেন স্বপন, রেডিও ধ্বনির উপস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও আবুল কাশেম। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন জান্নাত। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও অনেকে।

এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যালেই চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১ জন। এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর তিনজনের। কয়েকজনের চিকিৎসা চলছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।

মোট ১৭ জন চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন বার্ন ইউনিটে। সেখানে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন পাঁচজন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘রোববার ১৭ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছিল। তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। আর একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকিদের মধ্যে মোট পাঁচজনকে ভর্তি রাখা হয়।’

চিকিৎসাধীন তিনজনের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ। তাদের দুজনকে আইসিইউতে ও একজনকে এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। বাকি দুজনকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

বার্ন ইউনিটে ভর্তি থাকা পাঁচজন হলেন নুরুন্নবী, ইমরান, রাসেল, জাফর ও কালু। তাদের মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন নুরুন্নবী ও ইমরান। তাদের শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন রয়েছে। এইচডিইউতে আছেন রাসেল। তার শরীরও ৯০ ভাগ পুড়েছে। জাফর ও কালু সাধারণ ওয়ার্ডে রয়েছেন। তারা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন সামন্ত লাল।

ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়ার পর পাঁচজনকে ১০২ ও ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন কামাল হোসেন, হৃদয়, ওসমান গণি, শামীম ও সুভাষ। তাদের মধ্যে ওসমান গণি স্বেচ্ছায় গতকাল রাতেই হাসপাতাল থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। আর সকাল থেকে হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না সুভাষকে।

হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে পাওয়া যায় ময়মনসিংহে একটি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক এস এম কামাল হোসেন। মাথায়, হাতেসহ প্রায় সারা শরীরে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। পাশেই বসা তার স্ত্রী সানোয়ারা খান শানু।

কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল কামাল হোসেনের। তাও জানান কীভাবে আহত হলেন। কামাল বলেন, ‘আমি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম চশমার পাওয়ার এডজাস্ট করাতে। হঠাৎ বিকট শব্দ আর আগুনে একটা ঝলক দেখি। মাথায় এসে কিছু একটা পড়ে। হাতেও আঘাত পাই। হাত আছে না নেই টের পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেতন হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে।’

মগবাজারের বিস্ফোরণে গুরুতর আহত এস এম কামাল হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা

স্ত্রী শানু বলেন, ‘দুজন একসঙ্গেই বের হয়েছিলাম। আমি বাবার বাসা শাহজাহানপুরে চলে আসি। আমার ফোনটা ছিল ওনার (কামাল হোসেন) কাছে। আমি সন্ধ্যার পর বাসায় চলে আসি। উনি চশমা ঠিক করাতে যান। রাতে ফিরতেছেন না দেখে আমি আমার এক আত্মীয়র নম্বর থেকে কল দিই। আমার ফোনটা ওনার কাছে ছিল।

‘কল করার পর পুলিশ ধরে। আমি জিজ্ঞেস করি, কী করছে আমার স্বামী, সে এখন কোথায়? ওপাশ থেকে পুলিশ বলে, আপনার স্বামী হাসপাতালে, দ্রুত আসেন। এরপরই আমরা হাসপাতালে আসি।’

কামাল হোসেনের মাথায় আঘাত আছে। ডান হাত কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত ভেতরে সব হাড় ভেঙে গেছে বলে জানান তার স্ত্রী শানু। তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলছেন, হাতটা ঠিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আর শরীরের বাকি আঘাতগুলো ঠিক হয়ে যাবে। মুখসহ সারা শরীরেই কাটাছেঁড়ার আঘাত রয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাঁচজনকে ভর্তি নিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে তিনজন আছে। তাদের মধ্যে হৃদয়ের হাতে ইনজুরি। কামালের মাথায়, হাত ও শরীর বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া শামীম নিউরো বিভাগে ভর্তি আছে। আশা করছি তারা দ্রুতই রিকোভারি করবে।’

মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সাত সদস্যের, বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের এবং পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সাত সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কমিটির প্রধান বাহিনীটির পরিচালক (প্রশাসন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কিছুটা সময় লাগবে, আলামত সংগ্রহ করছি। ভবনের মালিক থেকে শুরু করে ভবনে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি।’

আর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কমিটি প্রসঙ্গে সংস্থাটির প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর