মাশুক হোসেন। থাকেন রাজধানীর জিগাতলায়। একটি বেসরকারি কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। অফিস গুলশান-বাডা লিংকরোডে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সীমিত লকডাউন বলে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তাতে অফিসগামীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে বলেছে সরকার। কিন্তু মাশুকের অফিস তা করেনি।
৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব পারি দিয়ে কীভাবে তিনি অফিসে এলেন, সেই গল্প বলেছেন নিউজবাংলাকে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চলেনি বাস, অটোরিকশা। চলেছে কেবল রিকশা আর প্রাইভেট কার।
মাশুক বললেন, ‘আজকের দিনটা খুবই ভয়াবহ ছিল। আমি আসলে আশাই করিনি যে বের হয়ে এই দৃশ্যটা আমি দেখব। বের হয়েই দেখলাম কোনো বাস নেই। যে যার মতো করে রিকশায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে রিকশাওয়ালারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছেন।’
লকডাউনে রাস্তায় রিকশার আধিক্য থাকলেও ভাড়া ছিল অনেক বেশি। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা
জিগাতলা থেকে এক রিকশায় অফিসে আসতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়েই দেখি রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে একটা রিকশা পেলাম যা ৩০ টাকার জায়গায় ৪০ টাকা নিয়েছে সিটি কলেজ যেতে।
‘সিটি কলেজ পর্যন্ত আসার পর আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন কোনোভাবেই বাস পেলাম না তখন আমি একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ-পাঠাওয়ে কল করলাম। কিন্তু ভাড়া ডবল। আমি সাধারণত অফিস পর্যন্ত আসি ১৫০ টাকা। কিন্তু আজকে আমার কাছে ৩০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে।
‘আমার পক্ষে ৩০০ টাকা দিয়ে অফিসে আসা সাধ্যের বাইরে। তো এর পর আমার একটু খারাপ লাগতে শুরু করল যে অফিসে কীভাবে যাব। কিন্তু আজকে অফিসে একটা মিটিং ছিল, যেভাবেই হোক মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেই হবে।’
পরে অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর সিটি কলেজ থেকে ৭০ টাকা ভাড়ায় একটি রিকশা ঠিক করে আসেন বসুন্ধরা সিটির সামনে পর্যন্ত। কিন্তু রিকশা কারওয়ান বাজার পার হতে দেয়নি পুলিশ।
এর পর হেঁটে সেখান থেকে আসেন এসে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যান ওয়াটারবাস।
বলেন, ‘ভাগ্য ভালোই বলতে পারেন যে, বোট চলাচল করছিল। আমি বোটে করে গুদারাঘাট পর্যন্ত আসি। এর পর সেখান থেকে হেঁটে অফিসে আসি।’
সব মিলিয়ে তার খরচ হয় ১৪০ টাকা। অন্যদিন লাগে ৮০ টাকা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা
মাশুক তার এই ভোগান্তির জন্য দায়ী করেছেন সরকারের অপরিকল্পিত নির্দেশনাকে। বলেন, ‘অফিস বন্ধ না করেই বাস বন্ধ করে দিলে যে অবস্থা হয় তাই দেখেছি। অনেক মানুষ তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। এদের মধ্যে অধিকাংশই আমার মতো অফিসগামী। আর আমার মনে হয়, অনেকই জানত, ৩১ তারিখের পরে শাটডাউন আসছে। তাই অনেকেই আমার মতো ভোগান্তিতে পরেছে।’
সরকার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সোমবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধে যাওয়ার কথা বলেছিল, যা এবার পরিচিতি পায় শাটডাউন হিসেবে। এবার সরকার সেনাবাহিনীও নামাচ্ছে, যার কারণে কড়াকড়ি বেশি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তবে শনিবার জানানো হয়, কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হবে ১ জুলাই থেকে। আর সোমবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন থাকবে।
মাশুক বলেন, ‘অনেককে রিকশা ভাড়া বেশি হওয়ায় হেঁটেই অফিসমুখী হতে দেখেছি। তবে আমার মতো অনেকের উদ্দেশ্যই ছিল যেভাবেই হোক অফিসে যেতে হবে। আমার দেখা সবাই ওইভাবেই চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘অফিস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ২/৩ ঘণ্টা আগেই বাসা থেকে বের হতে হবে। যাদের অফিস দূরে হেঁটে কিংবা রিকশায় আসতে হবে। আর অবশ্যই বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে হবে। এর বাইরে তো কোনো পথ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
মাশুকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সন্ধ্যায়। তখন তিনি বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দেখা হয় মধ্য লিংক রোডেই।
বলেন, ‘এখন আমি কীভাবে বাসায় যাব সেটাই বুঝতে পারছি না। তবে যেভাবে আসছি সেভাবেই যাওয়ার চেষ্টা করব।’