মগবাজারে বিস্ফোরণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় আড়ং শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উল্টো দিকে এই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অর্ধশতাধিক।
বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শক্তি এত বেশি ছিল যে আগুনের ঝলকানিও দেখা যায়। এতে আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ বলছে, সব মিলিয়ে ৭টি ভবনের ক্ষতি হয়েছে। ভবনের সামনে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মগবাজারের ফ্লাইওভারের নিচে তিনতলা ভবনটির নিচ তলায় ছিল গ্র্যান্ড সুইটস, বেঙ্গল মিটস ও শর্মা হাউসের দোকান। ভবনটার পেছনের অংশে বিস্ফোরণ ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণের কারণে প্রথমে ভবনের পেছনের অংশের দেয়াল ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া কিছু অংশ বাইরে বের হয়ে এসেছে। ভবনে দোতলায় সিঙ্গারের শো রুম। সেই শোরুমের দেয়ালও ভেঙে গেছে। সিঙ্গারের বেশকিছু পণ্য বাইরে বেড় হয়ে আসে।
ভবনের নিচতলায় ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নেই। দোকানপাট সব ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতে ভবনটি পুরোপরি অরক্ষিত বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তার উল্টো পাশের আড়ং ভবনঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাহিনীর মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিশাল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ভবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবন অবশ্যই বসবাসের অনুপযোগী। এটি আমি এখনই বলে দিতে পারি। এটা পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই।’
বিস্ফোরণের কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করব।’
তবে প্রাথমিকভাবে তার ধারণা, গ্যাস বা গ্যাস জাতীয় দব্য থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।
এই ভবনে গ্যাসের অবৈধ লাইন আছে কি না- জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমার জেনেছি ভবনে নিচ তলাতে একটি ফাস্টফুডের দোকান ছিল। সেখাসে গ্যাসের লাইন ছিল। এই লাইনটি বৈধ কী অবৈধ এখন বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ভবনে সামনে রাস্তার কাজ চলছে সেখানেও গ্যাসের লাইন আছে। এই লাইনে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে কি না এটাও এখন বলা যাবে না।’
আহত নিহতের বিষয় জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৯ জন, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ১৭ জন, মহানগর হাসপাতালে কয়েকজন। আদদ্বীন হাসপাতালে দুই জন সব মিলিয়ে ৬০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।
বিস্ফোরণটি জমে থাকা গ্যাস হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে খুব সম্ভবত গ্যাস জমে ছিল। সেই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণেই আশপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে খবর পেয়েছি তাতে ৭জন মারা গেছেন।’
এ ঘটনা কোনো নাশকতা কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার কাছে নাশকতা মনে হচ্ছে না। নাশকতা হলে স্প্লিন্টার থাকত। স্প্লিন্টারের আঘাতে আশপাশের মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ত। আপনারা বাস দেখেছেন। বাসে কিন্তু কোনো স্প্লিন্টার নেই। সুতরাং এটা বলা যায় এখানে বোমার কোনো ঘটনা ছিল না। গ্যাস থেকেই এটা হয়েছে।’