‘আল্লাহ রে, একটা বিকট শব্দ কানে লাগল। তাকাইতেই দেহি একটা দলা পাকানো ধোঁয়া আইতাছে। সব কিছু কাঁপতেয়াছিল। ঝন ঝন করে কাঁচ সব ভাইঙ্গা পড়ে। লোকজনে ছোটাছুটি। এরপর আমার কিচ্ছু মনে নাই।’
মগবাজারের বিস্ফোরণ কেমন ছিল, এমন প্রশ্ন করতেই ওই সময়ে ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীতে আড়ং শো রুমে দায়িত্বপালন করা এক নিরাপত্তা কর্মী নিউজবাংলাকে এসব কথা বলেন। তবে নিজের নাম বলেননি তিনি।
কথা বলার সময় তাকে অসহায় দেখাচ্ছিল খুব। প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় সৃষ্টি কর্তার কাছে সন্তুষ্টির শেষ নেই তার। বললেন, ‘ভাই, মউতরে নিজের চক্ষে দেখছি…’। তারপর কেঁদে দিলেন আড়ংয়ের ওই নিরাপত্তাকর্মী।
ঘটনার এই বর্ণনা সহকর্মীরা ভালোভাবে নিচ্ছিলেন না তার সহকর্মীরা। ফলে কথা আর বাড়াননি তিনি।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উল্টো দিকের মূল সড়ক লাগোয়া একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আগুনের ঝলকানি দেখা গেলেও তা অগ্নিকাণ্ডে রূপ নেয়নি।
কিন্তু বিস্ফোরণ এত ভয়াবহ ছিল যে, শত ফুট দূরত্বে থাকা রাস্তার উল্টো পাশের আড়ং ভবনের ৫ তলা পর্যন্ত যত কাঁচ ছিল সব ভেঙে পড়েছে। পাশের তিন তলা বিশাল সেন্টারেরও কোনো কাঁচ অক্ষত নেই।
বাংলামোটর আর ওয়্যারলেসকে সংযুক্ত করা ফ্লাইওভারের ওপর যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওই বিস্ফোরণে। যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তার পেছনে দেখা যায়, দেয়াল ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের আঘাতে ভবনের কিছু অংশ বেরিয়ে আসে। উপরের তলায় থাকা সিঙ্গার শোরুমের স্তূপ করে রাখা ফ্রিজ অরক্ষিত অবস্থায় সেখানে আটকে আছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছে, পুরো ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অপর প্রান্তে গোটা সড়কজুড়ে সব ভাঙা কাঁচ। সাধারণ পথচারীদের হাঁটা চলা বন্ধ রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বলছেন, আড়ং ভবন থেকে এখনও ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো ঝরে পড়ছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ফ্লাইওভারের ওপরে উঠে দেখা গেলো, আড়ংয়ের ভেতরে পরিষ্কার করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। বর্ষার দিনে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে পলিথিন দিয়ে কোনরকম পণ্য ঢেকে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
আড়ংয়ের ভেতরের ক্ষয়ক্ষতি নিতে তেমন কিছু জানা যায়নি। নিরাপত্তার কারণে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। মগবাজার বিস্ফোরণকে নাশকতা হিসেবে দেখছে না বাহিনীটি। তারা বলছে, জমে থাকা গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেয়া ফায়ার সার্ভিস বলছে, এটা বোমাসদৃশ বিস্ফোরণ। তারা বলছে, এটা অনেক বড় বিস্ফোরণ ছিল; শব্দ হয়েছে বোমা ফাটার মতো।
তবে ঠিক কী কারণে এ বিস্ফোরণ তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। প্রকৃত কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের কমিটি। সাত কার্য দিবসে প্রতিবেদন জমা দেবে তারা।