বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এলএসডি-ডিএমটি আসে ‘পোস্টাল সার্ভিসে’

  •    
  • ২৭ জুন, ২০২১ ১৭:০২

র‌্যাব বলছে, বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য অবস্থানকালেই সম্ভ্রান্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে এসব ভয়ংকর মাদকে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে নতুন মাদক ডিএমটিতে, কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছেন। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বই কিংবা কোনো কাগজের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছেন এলএসডি ও ডিএমটি।

সময়ের আলোচিত এলএসডি ও নতুন মাদক ডিএমটি দেশে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে আনা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পুলিশের এই এলিট ফোর্স বলছে, এসব মাদকের ব্যবহারকারীদের সবাই উচ্চবিত্ত।

দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারি ও তদন্তের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে এলএসডি ও ডিএমটিসহ চারজনকে আটকের পরদিন রোববার র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

আটককৃতরা হলেন সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদ ওরফে শাদাব, আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের, স্বপ্নীল হোসেন ও সিমিয়ন খন্দকার। শনিবার রাত ১১টার দিকে তাদের আটকের সময় উদ্ধার করা হয় ৪০ ব্লট এলএসডি, ৬০০ মিলিগ্রাম ডিএমটি, ৬২ গ্রাম আমেরিকান ক্যানাবিজ এবং মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম।

র‌্যাব বলছে, বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য অবস্থানকালেই সম্ভ্রান্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছেন এসব ভয়ংকর মাদকে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে নতুন মাদক ডিএমটিতে, কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছেন। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বই কিংবা কোনো কাগজের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছেন এলএসডি ও ডিএমটি।

র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘মাদক চোরাকারবারি এবং মাদকসেবীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রচলিত এমন কিছু মাদকের ব্যবহার বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে যুব সমাজ এতে আসক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এলএসডি সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। এটি মূলত বিদেশ থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়। উচ্চমূল্য হওয়ায় মূলত এর ব্যবহারকারী উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, উদ্ধার নতুন মাদক ডিএমটি যার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নাম ‘Dimethyl Tryptamine’। এটি একটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। মূলত এটি মুখে এলএসডি সেবনের মতো, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সাথে নেয়া যায়। এটি সেবনের পরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর আসক্তি তৈরি করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের ভাষ্যে র‌্যাব জানায়, এটি সেবনের পর দ্রুত হ্যালুসিনেশন হয় এবং কল্পনার জগতে প্রবেশ করা যায়। এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে, এমনকি জীবননাশও হতে পারে।

র‌্যাব জানান, আটক সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদ ওরফে শাদাব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল শেষ করার পর ভারতের দার্জিলিংয়ে ২০১৩ সালে এ লেভেল পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ২০১৫ সালে বিবিএ পড়ার জন্য থাইল্যান্ড যান।

সেখানে এক বছর বিবিএ পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে এলএসডি ও ডিএমটি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন শাদাব। পরবর্তীতে বাংলাদেশে এসেও ওই মাদক গ্রহণ ও সংগ্রহ অব্যাহত রাখেন। শাদাব মূলত এই ড্রাগ বিদেশ থেকে বিভিন্ন পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশে নিজে গ্রহণ ও বিক্রি করেন।

র‌্যাব বলছে, আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল শেষ করে মালয়েশিয়া যান। ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত পড়ালেখার জন্য সেখানে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। সেখানে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ করতেন। সেখান থেকে এমবিএ শেষ করে ২০২০ সালে বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ ও বিক্রি করছিলেন।

আটক অপর দুজন স্বপ্নীল হোসেন এবং সিমিয়ন খন্দকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, এই মাদক সমুদ্র বিচে, পাহাড়, রিসোর্ট ও বিনোদন স্পটে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এসব নতুন নতুন মাদক ছড়িয়ে পড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এলএসডি মাদক জব্দ হয়েছে। সেবনকারী ও ব্যবহারকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে ডিএমটি নামক এই মাদক এর আগে কখনো জব্দ হয়েছে বলে জানা যায়নি। এই মাদক প্রকৌশল বা রাসায়নিক গবেষণাগারেও তৈরি করা সম্ভব।

‘এখন পর্যন্ত এই দুই শ্রেণির মাদক বিশেষ শ্রেণির হাতেই রয়েছে। তারা নিজেরা পরিচিতদের মাধ্যমে ডিএমটি ও এলএসডি আমদানি করে। কখনো নিজেরা গিয়েও নিয়ে আসে। কুরিয়ার বা পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে চিঠি বা বইয়ের মাধ্যমে এগুলো সহজে নিয়ে আসা সম্ভব। এসব মাদক সহজলভ্য বা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে র‌্যাব নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, আটককৃতরা নিজেরাই মাদক সেবন করেন, বিক্রি করেন এবং নতুন নতুন মাদকগ্রহীতা তৈরি করেন যা সমাজের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক। এসব মাদকের উৎস এবং এর সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও র‌্যাব থেকে জানানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর