শাটডাউন বা সর্বাত্মক লকডাউন তিন দিন পিছিয়ে গেলেও রোববার সকাল থেকে লোকজনকে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। কোনো দূরপাল্লার বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে না গেলেও ভেঙে ভেঙে নানা উপায়ে ঢাকা ছাড়ছে তারা।
যারা ঢাকা ছাড়ছেন, তারা জানেন না, কতদিন আর কতটা কঠোরভাবে পালন করা হবে লকডাউনের বিধিনিষেধ। তবে গণমাধ্যমে প্রচারিত সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আগাম আভাস থেকে সাধারণেরা মনে করছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসের লকডাউনের চিত্রই দেখা যাবে আবার। তাই অনেকে ধরে নিচ্ছেন, লকডাউন টানা চলবে ঈদুল আজহা পর্যন্ত। অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন ঈদ করে ঢাকা ফিরবেন বলে।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে রোববার ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। তাই হেঁটে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে। কেউ কেউ আবার যাচ্ছেন ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে।
দুই হাতে বড় দুই ব্যাগ নিয়ে হেঁটে গাবতলী থেকে আমিনবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমির হোসেন। কথা বলে জানা গেল যশোর যাবেন তিনি। সরাসরি কোনো বাস নেই। তবে হেঁটে আমিনবাজার পার হলে আন্তজেলা বাসে চড়ে ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাবেন। তারপর আবারও হেঁটে ফেরি পার হয়ে ভেঙে ভেঙেই বাড়ি যাবেন।
এত কষ্ট করে কেন বাড়ি যাচ্ছেন প্রশ্ন করতে আমির হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় আমি ছোডখাডো ব্যবসা করি, মেসে থাকি খাই। লকডাউন পড়িলে ঘরে বসি থাকিলে আমারে খাওয়াবে কিডা কন দেহি? তারচে সুযোগ যেহেতু পায়েছি, ঈদ করি ঢাকায় ফিরবানে। ছাওয়ালডিও খুশি অবিনে। আয় রোজগার থাকবি না; আমারও খরচ বাঁচবিনে।’
কাঁধে ব্যাগ আর বয়স্ক দাদির হাত ধরে আমিনবাজার ব্রিজ পার হচ্ছিল স্কুলছাত্রী মারিয়ম আক্তার। যাবে নাটোরের সিংড়ায়।
কীভাবে যাবে জানতে চাইলে বলে, ‘শুনেছি আমিনবাজার গেলে লোকাল বাস পাওয়া যাবে। বাস বদলে বদলে যাব।’
বয়স্ক দাদি এভাবে যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার আব্বু-আম্মু কয়েক দিন আগে বাড়ি গিয়ে লকডাউনে আটকা পড়েছেন। সামনে আবার লকডাউন দিবে। তাই আমি আর দাদি চলে যাচ্ছি। সবাই বাড়িতে ঈদ করব।’
এক মাসের নবজাতক কোলে নিয়ে ঢাকা ছাড়ছিলেন এক দম্পতি। যে করেই হোক বাড়ি পৌঁছাতে হবে। কারণ লকডাউন শুরু হলে আর যাওয়া যাবে না। সন্তানকে নিয়ে তারা প্রথম ঈদ করতে চান পরিবারের সঙ্গে।
রাস্তায় দেখা মিলল সদ্য পাকস্থলির অপারেশন করা রোগী আকলিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কয়েক দিন আগে অপারেশন করিয়েছেন আকলিমা। তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হতো।
কিন্তু ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা নেই। লকডাউনে বিপাকে পড়তে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই সিরাজগঞ্জে রওনা হয়েছেন তারা।
এভাবে যে যার মতো করে ঢাকা ছাড়ছেন সাধারণরা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের, দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষেরা তল্পিতল্পা গুটিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউনে না খেয়ে থাকার ভয়।
পাবনাগামী দিনমজুর আলী হোসেনও ঢাকা ছাড়ছেন একই কারণে।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কাম-কাইজ পামু কই? খাওন দিব কিডা? অহন সব লইয়া যাইগা, আবার ছাড়লে ডাহা আইসমুনে।’