ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোববার সমাবেশ শেষ করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে জিরো পয়েন্ট মোড়ে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার এস এম বজলুর রশিদ বলেন, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা ১৫-২০ মিনিট জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন গোলাপ শাহ মাজার হয়ে যান চলাচল করেছে। পরবর্তীতে তারা চলে গেছেন।
বাধার মুখে দুই শতাধিক রিকশাচালক জিরো পয়েন্টে সমাবেশ করেন। তারা জানান, গত ২০ জুন জাতীয় সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধ ঘোষণা করায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে সারা দেশে কয়েক লাখ রিকশাশ্রমিকের রুটি-রুজি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাৎ খা।
তিনি বলেন, গ্যারেজ ও বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দরিদ্র রিকশাওয়ালাদের রিকশা, ব্যাটারি, মোটর, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সকল ব্যাটারি, মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধ ছিল না। গরিব রিকশাওয়ালারা সুদের ওপর কিস্তিতে কিংবা সঞ্চয় ভেঙে রুটি-রুজির জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছেন। শ্রমিকরা বাণিজ্যিক দরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। কোনো ধরনের সংস্কারমূলক প্রস্তাব বিবেচনায় না নিয়ে বন্ধের ঘোষণা লাখ লাখ শ্রমিককে পথে বসিয়ে দিয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি জৈব জ্বালানিবিহীন পরিবেশবান্ধব বাহন হওয়ায় তা বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা। তারা বলছেন, এসব রিকশা-ভ্যান বাংলাদেশের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাহন বলে আমরা এটা নিয়ে নানাভাবে গর্ব করে থাকি। অথচ রিকশাচালকদের অমানবিক পরিশ্রম ও কষ্ট লাঘবে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিক মহল, কাউকেই তেমন কিছু করতে দেখা যায় না। বিজ্ঞান প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জল, স্থল এবং আকাশপথে সকল যান রূপান্তরিত হয়ে আধুনিক থেকে আধুনিকতম হলেও রিকশা নামক অতিসাধারণের এই বাহনটি আদি থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
‘ন্যানো টেকনোলজির এই যুগে আমাদের দেশের লাখ লাখ রিকশাচালক মানুষ হয়ে মানুষকে টানছেন, যা আমাদের জাতিকে শুধু লজ্জিতই করে না, আধুনিক সভ্যতাকেও পরিহাস করে। পৃথিবীর কোনো দেশে এতসংখ্যক শ্রমিক এ ধরনের অমানবিক পেশার সাথে যুক্ত নন। যান্ত্রিক উৎকর্ষতার যুগে উন্নত বিশ্বে যখন পশু দিয়ে অতি পরিশ্রমের কাজ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়, সেখানে জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ ভারবাহী পশুর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই রিকশার যান্ত্রিকীকরণ একটি আবশ্যিক মানবিক কর্তব্য।’
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের জন্য চালকেরা বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল দিতেও রাজি বলে সমাবেশে জানানো হয়। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ জাতীয় সম্পদ। সুতরাং বৈধ পথে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। তা ছাড়া, রিকশা কোনো ব্যক্তিগত বাহন নয়। এটি গণপরিবহনেরই একটি অংশ। গণপরিবহনে বিদ্যুৎ ব্যবহার তার গণস্বার্থকে উপকৃত করবে। কারও ব্যক্তিগত আরাম বা বিলাসিতায় এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে না। ব্যাটারিচালিত প্রত্যেক রিকশাচালক তার ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য বাণিজ্যিক মূল্য দিতে আগ্রহী।
সমাবেশে জানানো হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশাশ্রমিকেরা সরকারকে রাজস্ব দিতে চান। সে জন্য একটি বিধিমালার মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদানের দাবিও তোলেন তারা। বুয়েট প্রস্তাবিত রিকশাবডি, এমআইএসটি উদ্ভাবিত গতি নিয়ন্ত্রক, উন্নত ব্রেকসহ ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স প্রদান করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান রাস্তায় চলতে দেয়ার অনুমতি চান তারা। এর আগ পর্যন্ত প্রধান প্রধান সড়কের বাইরে অন্যান্য রাস্তায় এবং নিচু এলাকায় আঞ্চলিকভাবে ব্যাটারি রিকশা চলতে দেয়ার দাবি জানানো হয়।
দুই শতাধিক রিকশাচালকের উপস্থিতিতে সমাবেশ শেষে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে।