বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাছ কাটা হবে বড়জোর ১০০, রোপণ হবে ১০ হাজার

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২১ ২০:৫৮

‘আমরা এখন পর্যন্ত ৬০-৭০টি গাছ কেটেছি। আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্যই ছিল ১০০ গাছ কাটার। আর ১০টি গাছ কাটা হবে কি না আমার সন্দেহ। গাছ লাগানোর আমাদের লক্ষ্য আছে, তখন ছিল ১০ হাজার যা এখন বাড়তেও পারে।’  

সংস্কারকাজ নিয়ে রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০টি গাছ কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেছেন, আর ১০টি গাছ কাটা হবে কি না, তা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম বিষয়ে এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

সেগুনবাগিচার গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অংশ নেন দেশের উদ্ভিদবিদ, পরিবেশবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণস্থল ও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সরকার নতুন করে সাজাতে চাইছে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় বেশ কিছু স্থাপনা করা হবে।

তবে এই প্রকল্পে কিছু গাছ কাটার সমালোচনা করেছেন পরিবেশবিদরা। বাকি গাছ রক্ষায় নানা কর্মসূচিও পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এর আগে জানানো হয়, তারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার আওতায় পাকিস্তানের ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত ভাস্কর্য, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য, ইন্দিরা মঞ্চ, জলাশয় ও ফোয়ারা, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির পার্কিং ও শিশুপার্ক থাকবে।

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য পুরো উদ্যানজুড়ে সাতটি ফুড কোর্ট ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আর মনোরম পরিবেশের জন্য বানানো হবে নান্দনিক ওয়াকওয়ে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি গাছকে একেকজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করেছে পরিবেশবাদী একটি সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

সেমিনারে মন্ত্রী মোজাম্মেল উদ্যানের চলমান ওই প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সেমিনারে উপস্থিত অনেকেই উদ্যানে আরও গাছ লাগানোর ওপর যেমন জোর দেন, আবার অনেকেই এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপরও জোর দেন। সেই সঙ্গে উদ্যানে খাবারের দোকান তৈরি পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।

উদ্যান সংরক্ষণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ থাকবে। যা এটার প্রকল্পেই ধরা আছে। নিরাপত্তার জন্য কেপিআই প্রকল্প থাকবে। এর আন্তর্জাতিক মান সংরক্ষণের জন্য যারা কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, প্রতিদিন ন্যূনতম ৫ হাজার দর্শনার্থী এখানে আসবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আমরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে নিয়ে তাদের এটা দেখাব। সে জন্যই খাবারের বিষয়টি থাকছে।’

গাছ বিষয়ে বক্তব্য

কত গাছ কাটা পড়বে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৬০-৭০টি গাছ কেটেছি। আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্যই ছিল ১০০ গাছ কাটার। আর ১০টি গাছ কাটা হবে কি না আমার সন্দেহ। গাছ লাগানোর আমাদের লক্ষ্য আছে, তখন ছিল ১০ হাজার যা এখন বাড়তেও পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘উদ্যানের বৃক্ষ নিধন হবে না। যদি হয় সর্বোচ্চ ১০০টি। কারণ, পরিবেশবিদরা যা বলেন তার সঙ্গে আমরা একমত। আর বাণিজ্যিক অর্থে সেখানে ফুডকোর্ট করা হচ্ছে না। আমরা জনগণের মতামতে শ্রদ্ধাশীল।’

এই বার্তাটি আগে পৌঁছাতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে এই মেসেজটা পৌঁছানো গেলে আগের বিষয়গুলো হতো না।’

তিনি জানান, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাইটিঙ্গেল, মেহেদী এমন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। মাঠজুড়ে গাছ লাগানো হবে।’

সূচনা বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালেই এর নকশা করা হয়। শিখা চিরন্তনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা করা হয় কিন্তু পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কাজগুলো স্থগিত করে। পরে ক্ষমতায় এসে ওয়াচ-টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। এখন তৃতীয় ধাপের কাজ চলছে। যেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, স্বাধীনতার ঐতিহ্য হিসেবে জাতির কাছে এটি উজ্জ্বল হয়ে থাকুক। কিছু গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ঐতিহাসিক স্থাপনা করার ক্ষেত্রে কারও দ্বিমত হওয়ার কথা না।’

গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: নিউজবাংলা

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘অনেক গাছ কেটে এই প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে, এমন একটি ধারণা হয়েছে, যা দূর করা প্রয়োজন। তা না হলে সমস্যার সৃষ্টি হবে।’

উদ্যানে এখন কত গাছ রয়েছে তা জানানোর পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, ‘কতগুলো গাছ কাটা হয়েছে তা বলে দেয়া উচিত। সেই সঙ্গে কত দিনে এই প্রকল্প শেষ হবে সে বিষয়ে বলে দেয়া উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জসিমউদ্দীন বলেন, ‘দেশের সবুজের জায়গা দিন দিন কমছে। যেখানে ২৫ শতাংশ থাকা দরকার, সেখানে আছে মাত্র ৭ শতাংশ। আমরা শিক্ষার্থীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসেই পড়াই। আগে এটা ছিল একটা পার্ক৷ এখন এটাকে কেন্দ্র করে গবেষণা হচ্ছে। যেখানে আমাদের ৫ হাজারের ওপরে প্রজাতির দেশি গাছ আছে, সেখানে আমরা বিদেশি চার-পাঁচটা প্রজাতি নিয়ে কেন থাকব?’

উদ্যানে থাকবে দুটি ভাস্কর্য

প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান এই তথ্য দিয়ে জানান, এর মধ্যে একটি থাকবে জাতির পিতার এবং অন্যটি পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের। জাতির পিতার ভাস্কর্যটির বেদি ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি ও ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার হবে। আর পুরো ভাস্কর্যটির উচ্চতা হবে ২৬ ফুট। এই উচ্চতার কারণে উদ্যানের বিভিন্ন জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী দেখা যাবে।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভাস্কর্যটির উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। এর বেদি হবে ৮ ফুটসহ ২৩ ফুট উচ্চতার।

দুটি ভাস্কর্যই ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মাণ করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর