বগুড়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় ভুয়া আগাম জামিনের জালিয়াতির মাধ্যমে আদেশ তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীবকে ছয় দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।
এর আগে শাহবাগ থানার পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে।
এরপর মামলার তদন্ত স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দিয়েছেন।
বুধবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা আইনজীবী রাজুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
জানা যায়, বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মামলায় ভুয়া আগাম জামিন আদেশ তৈরির ঘটনায় সিআইডির তদন্তে চারজনের নাম উঠে আসে।
তারা হলেন, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীব, বগুড়া আদালতের আইনজীবী তানজীম আলম ইসলাম, ঢাকা জজ কোর্টের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ রানা ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবীর সহকারী মো. সোহাগ। পরে কারাগারে থাকা সোহাগ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৯ জুন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত দুই আইনজীবী ও কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ রানাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের জাল আদেশ দাখিল করে বগুড়ার আদালত থেকে জামিন নেয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় হাইকোর্ট গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে যুবলীগের সহসভাপতি (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও কাউন্সিলর মো. আমিনুল ইসলামসহ ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়াতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ছোট ভাই মশিউল আলম ১০ ফেব্রুয়ারি বগুড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় যুবলীগের সহসভাপতি মো. আমিনুল ইসলামসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আমিনুল ইসলামসহ ৩০ জনের জামিন নেয়ার একটি জাল আদেশনামা (জামিন আদেশ) তৈরি করা হয়।
জাল আদেশনামায় দেখানো হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে আসামিদের ছয় সপ্তাহের জামিন দেয়া হয়েছে। এই জামিন শেষে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে এই ভুয়া আদেশের তথ্য সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসে।
এ সময় রাজুর পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।