রাজধানীর রূপনগরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছয় শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
অপর যে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে, তিনি হলেন আবু সাঈদকে বেলুনের সিলিন্ডার কিনে দেয়া হালিম মৃধা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপনগর থানার পরিদর্শক মোকাম্মেল হক (নিরস্ত্র) দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩/৪ (খ) ধারায় এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন।
বৃহস্পতিবার রূপনগর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে অভিযোগপত্রের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করা হয়েছে।
মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দীন খান হিরন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুজন আসামির নামে রূপনগর থানার পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে এবং আদালত তা গ্রহণ করে নথি বিভক্তির আদেশ দিয়েছে।
গত ২২ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।
অভিযোগপত্রটি পৃথক ধারায় হওয়ায় মামলাটির নথি বিভাজনেরও আদেশ দেয় আদালত।
এদিকে মামলাটি সিএমএম বরাবর পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী বিচারের জন্য সিএমএম মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রূপনগরের ১১ নম্বর সড়কে বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন এক বিক্রেতা। সে সময় হঠাৎ করে গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই ৬ শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলো রুবেল, ফারজানা, রমজান, নুপুর, রিয়া মনি ও রিফাত।
বিক্রেতা আবু সাঈদসহ আহত হন আরও ২০ জন।
ওই দিন দিবাগত রাত ৩টায় রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন বণিক বেলুন বিক্রেতার বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন।
এদিকে বিস্ফোরণে আহত হয়ে বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে চিকিৎসা নেন।
চিকিৎসা শেষে ১৬ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।
রিমান্ড শেষে ৩০ জানুয়ারি আবু সাঈদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আগে দর্জির কাজ করতাম। ঘটনার কিছুদিন আগে বেলুনের কাজ নিই।’
‘ঘটনার দিন গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। এতে আমিসহ একাধিক লোক আহত হয়। আমার বাম হাতের দুই আঙুল উড়ে যায়। বাম হাত ভেঙে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ এরপরের ঘটনা তিনি আর কিছুই জানেন না।
বেলুনে গ্যাস ভরার সিলিন্ডার কিনে দেয়া হালিম মৃধা বলেন, তিনি বেলুন ব্যবসা করেন। বাসা সাভার। মাঝে ভাঙারির ব্যবসার জন্য মিরপুর যান। তখন আবু সাঈদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
সাঈদ তাকে বলেন, বেলুন ফুলানোর ব্যবসা করবে। সহযোগিতা চায়।
সিলিন্ডার কেনার কথা বলে বিকাশে দুই হাজার টাকা পাঠান। পরে ভাইকে নিয়ে তার বাসায় গিয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে আসেন।
তিনি জানান, ‘পরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা শুনতে পাই।’