মাদকের চালান গন্তব্যে নিতে অভিনব কৌশল নিচ্ছে কারবারিরা। বুধবার এক অভিযানে জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহার করা তেলের ট্যাংকার থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫০ কেজি গাঁজা। আলাদা অভিযানে প্রাইভেট কারের গ্যাস সিলিন্ডারে পাওয়া গেছে ২০ হাজার ইয়াবা।
মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা তেলের ট্যাংকার ও প্রাইভেট কারসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ মাদক কারবারিকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান বিভাগ এ দুটি অভিযান চালায়।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে দুটি অভিযান চালানো হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার খুলে পাওয়া যায় ২০ হাজার ইয়াবার চালান। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জনি খান ও হৃদয় শিকদার নামের দুজনকে।
তিনি জানান, শ্যাওড়া এলাকায় তেলের ট্যাংকার তল্লাশি করে মিলেছে ৫০ কেজি গাঁজা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে রিগ্যান খান, জাকির হোসেন ও খোকন মৃধা নামের তিনজনকে।
গ্যাস সিলিন্ডারে ইয়াবা
একটি সাদা রঙের রিকন্ডিশন্ড টয়োটা এক্সিও প্রাইভেট কার যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকায় ঢুকছিল। গাড়ির গায়ে মার্কারের কালিতে লেখা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রিলিজের নম্বর। রেজিস্ট্রেশন হয়নি বলে শোরুমের নম্বর ঝুলিয়ে গাড়িটি চলছিল।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবির একটি চৌকস দল বুধবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গাড়িটি থামায়। তল্লাশির সময় চালক দাবি করেন, গাড়িটি বন্দর থেকে রিলিজ করে গাজীপুরের শোরুমে নেয়া হচ্ছে।
তল্লাশিকালে গাড়ির পেছনে গ্যাসের সিলিন্ডার দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। কারণ আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকে না। ভিন্ন আদলের এ সিলিন্ডারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখেই জানা যায় মাদক চোরাচালানের তথ্য।
পুলিশ জানায়, সিলিন্ডার খুলে উদ্ধার করা হয়েছে ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি। আটক জনি খান ও হৃদয় শিকদার পেশাদার ইয়াবা কারবারি। টেকনাফের উখিয়া থেকে ৮ লাখ টাকায় ইয়াবার চালান কিনে তারা গাজীপুর যাচ্ছিলেন।
পুলিশ আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই মাদক কারবারিদের অভিনব এ পরিকল্পনা। পাইকারি মাদক বিক্রির জন্য প্রাইভেট কারটি ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।
তেলের বদলে গাঁজা
পুলিশের ভাষ্য, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল বহনে ব্যবহার হয় ট্যাংকারটি। চালক খোকন মৃধা মাদক বহনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন জাকির হোসেন ও রিগ্যান খানের সঙ্গে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে গাঁজার চালান ঢাকায় নিতে লেনদেন হয় মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি।
তেল আনলোড করার পর ট্যাংকারে বিশেষ কৌশলে ভরা হয়েছিল কয়েক বস্তা গাঁজা। প্রায় ৫০ কেজি গাঁজা নিয়ে দুই কারবারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। শ্যাওড়া এলাকাতে ধরা পড়েন গুলশান ডিবির জালে।
আটকের পর দুই মাদক কারবারিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তারা আখাউড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে। ছোট ছোট চালান নিয়ে তারা ঢাকায় পৌঁছে বিভিন্ন এলাকার মাদক ডিলারদের কাছে তা বিক্রি করে। আগে অনেকবার তারা বিশেষ কৌশলে মাদক চালান আনলেও এবার ধরা পড়ে গেছে।
ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘মাদক কারবারিরা টাকার লোভে কাউকে ভয় করে না। অভিযানে আটকের পরও তারা মাদক কারবার থেকে বিরত থাকে না।
‘মাদক কারবারিদের আটকের পাশপাশি মাদকসেবীদের সংখ্যা কমানোর দিকে নজর দিতে হবে।’