ঢাকার চারপাশে চার জেলাসহ সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর সঙ্গে বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যোগাযোগ। তাই সকাল থেকে চিরচেনা রূপে দেখা যায়নি রাজধানীর বড় বড় বাস টার্মিনালগুলো।
রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাইকিং করে পরিবহন মালিক সমিতি যাত্রীদের বাস বন্ধের বিষয়টি জানায়। সেই সঙ্গে যারা টার্মিনালে ঘোরাঘুরি করছিলেন তাদের টার্মিনাল বের হতেও বলা হয় মাইকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের সবগুলো কাউন্টার বন্ধ। লকডাউনের খবর অনেকে না জেনে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর বাসগুলো সব সারিবদ্ধভাবে রেখে অলস বসে ছিলেন চালক, সহকারীরা।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাকে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সোমবার। এ জন্য মঙ্গলবার ভোর থেকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জে দেয়া হয় লকডাউন।
পাশাপাশি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ীতেও শাটডাউন আরোপ করা হয়। এই অবস্থা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
সোমবার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই ৭ জেলায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন চলবে।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকেও। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলামঙ্গলবার ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। যেহেতু এটা সবজায়গাতে কার্যকর রয়েছে তাই আমরাও নির্দেশনা মেনে গাড়ি চালানো বন্ধ করেছি।’
প্রজ্ঞাপনে দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ নেই জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে লকডাউন দিয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার আমাদেরকে ফোন করে জানিয়েছেন, জেলায় গাড়ি যেন চলাচল না করে।
‘ঢাকা থেকে যে গাড়ি বিভিন্ন জেলাতে চলাচল করে তা এসব জেলা দিয়ে পার হয়। তাই আমরাদেরকে বন্ধ রাখতে হবে। এককথায় বলতে গেলে, ঢাকা থেকে সব জায়গায় যাওয়া বন্ধ রয়েছে।’
মহাখালী টার্মিনাল থেকে মাইকে ঘোষণা করছিলেন সমিতির সহসভাপতি হাজী চান মিয়া।
চান মিয়া বলেন, ‘অনেকেই এখন পর্যন্ত জানেন না; আমরা তাও সকাল থেকেই ঘোষণা দেয়া চালু রেখেছি। যাতে কেউ টার্মিনালে ভিড় না করেন। যারা আসছে তাদের সংখ্যা খুব কম।’
নেত্রকোনা যাবেন এমন এক দম্পতি নিউজবাংলাকে বলেন, তারা না জেনেই টার্মিনালে গেছেন।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকেও ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার বাস। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলাছোটন রায় নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। কাল রাতে শুনেছি সব বন্ধ থাকবে। তবে সবগুলো জেলার কথা উল্লেখ ছিল বলে এসেছি। এখন তো যেতেই পারব না।’
বাস মালিক মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া ছাড়া কোন গতি নেই। এই সিদ্ধান্ত সবার ভালোর জন্য দেয়া হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ রোধে এর আগে টানা ৪৯ দিন বন্ধ ছিল দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল। সে ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেয়া হবে জানতে চাইলে মানিক মিয়া বলেন, ‘দেখেন ওই ক্ষতি তো সহজে পুষিয়ে নেয়া যায় না। আমরা মাত্র ২৫ দিন গাড়ি চালাতে পেরেছি। এখন আবার বন্ধ রয়েছে। ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেখি কী হয়। আমাদের টার্মিনালে সব মিলে পাঁচ শ’র মত শ্রমিক আছেন। তাদের দৈনিক চাহিদা মেটানোর বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’
মহাখালীর মত বন্ধ আছে ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ছোট ছোট পরিবহন চললেও সেগুলো ঢাকার ভিতরেই। শহরের বাইরে কোনো বাস যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।